পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬২৪

মানিক গ্ৰন্থাবলী ཐཅ বেশী অন্যমনস্ক হইয়া গেল যে হেরম্বের মনে হইল শুধু বঁচিয়া থাকার জন্য নয়, একটা অন্যতম বৃহৎ কারণে অকাল-বৃদ্ধের বঁাচিয়া থাকাটা অত্যন্ত প্ৰয়োজনীয় হইয়া পড়িয়াছে। চেষ্টা করিয়াও সে এই উদ্যত প্রশ্নটাকে আটকাইয়া রাখিতে পারিল না ; বেঁচে থাকা দরকারী কেন ? অন্তকিতে একটা অতি বড় অপরাধ যেন ধরা পড়িয়াছে, এমনিভাবে চমকাইয়া উঠিয়া রাধা কেমন বিহবল হইয়া গেল । সে আপনি বুঝবেন, আপনাকে আমি বুঝিয়ে দেব। আপনি আজ আমায় একটা ভিক্ষা দিন । ওকে বঁচিয়ে রাখার জন্য আমাকে আপনার नांशश করতে হবে । করবেন ? s হেরম্ব ব্যস্ত হইয়া বলিল, করব বৈ কি। নিশ্চয় করব । পরম আশ্বস্ত হইয়া রাধা বলিল, ডাক্তার বলেন দু’এক বছরের মধ্যে ওর কিছু হবে না। আপনার কি মনে হয় ? আমার মনে হয়। উনি সেরে উঠবেন। না, সে আশা আর নেই। বলিয়া রাধা ঘরে ঢুকিয়া পড়িল। বেলা বাড়িয়া উঠিয়াছিল। সেমিজ খুলিয়া চুল এলাইয়া দিয়া গামছা হাতে রাধা বাহির হইয়া আসিলে হেরম্ব বিদায় চাহিল। রাধা বলিল, বিকালে ছেলে মেয়েদের নিয়ে আসবেন । হেরম্ব হাসিল, কার ছেলে মেয়ে ? আমার ? কোথায় পাবো । ছেলে মেয়ে নেই। আপনার ! এ যেন অকথ্য, অবিশ্বাস্য, কল্পনাতীত দুঃসংবাদ ! হেরম্বের মনে হইল ইচ্ছা করিয়াই গামছাট ফেলিয়া নিয়া কুড়াইবার ছলে রাধা কয়েক মুহুর্তের জন্য মুখখানা আড়াল করিল। সোজা হইয়া দাড়াইতে দেখা গেল ওইটুকু সময়ের মধ্যে মুখের হতাশাব্যঞ্জক ভাবটা সম্পূর্ণ মিলাইয়া দিতে পারে নাই। একটুখানি মান হাসিয়া বলিল, আপনাকে দেখেই কিন্তু মনে হয়েছিল। আপনার ঘরভরা ছেলেমেয়ে । এমন স্বাস্থ্য এমন রূপ এমন প্ৰতিভার জ্যোতি মুখে চোখে রাধা দ্রুতপদে স্নানের ঘেরা স্থানটুকুতে ঢুকিয়া পড়িল । হেরম্ব খানিকক্ষণ নড়িতে পারিল না। রাধার মন্তব্য খুব বেশী অদ্ভুত ও আকস্মিক তাহা নয়, ছেলে মেয়ে নাই শুনিয়া যে আশ্চৰ্য মুখভঙ্গি সে করিয়াছিল এ মন্তব্যের জন্য তার চেয়ে বিশদ ও সুস্পষ্ট ভূমিকার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু VRV)