পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী কামিল না। সন্ধ্যার অন্ধকার যখন ঘনাইয়া আসিল অধরের সঞ্চিত শব্দ তখন নিঃশেষ হইয়া গিয়াছে, কাশিতেছে হিক্কা ওঠার মত। কাশির বিরামের অবসরে মাথা উঁচু করিবার চেষ্টায় চােখের গর্ত জলে ভরিয়া উঠিতেছে, সর্বাঙ্গ থর থর করিয়া কঁাপিতেছে। প্ৰথম হইতে রাধার একটি হাত সজোরে চাপিয়া ধরিয়াছিল, এখনো ছাড়ে নাই। যে দুনিবার স্রোত আজ তাহাকে মরণের পরপারে ভাসাইয়া নিয়া যাইতে চায়, নোঙরের মত রাধা যেন তাহার্কে ব্যর্থ করিবে । দেয়ালে ঠেস দিয়া রাধা মড়ার মত চোখ বুজিয়া বসিয়া আছে। দৈত্যের মুখখান দেখিবার জিনিস। অত বড় বিপুল দেহে অমন অসীম শক্তি নিয়া সে যে শিশুর মত ভীত অসহায় দৃষ্টিকে চারিদিকে সঞ্চালন করিতেছে অন্ধের যন্ত্রণার চেয়ে তাহা যেন সকরুণ । ওর অল্প পরিমাণ মস্তিষ্কে কি ক্রিয়া চলিতেছে কে জানে ? হঠাৎ রাধা বলিল, হেরম্ব বাবু, ওকে বাঁচান। বেশী নয়। আর কয়েকটা মাস—শুধু আর কাটা মাস ওকে বঁচিয়ে রাখুন। ডাক্তার উপস্থিত থাকিতে তাহাকে এই মিনতি জানানোর মধ্যে এমন ভয়ঙ্কর একটা ইঙ্গিত ছিল যে হেরম্ব কোন আশ্বাসের বাণী উচ্চারণ করিতে পারিল না । ডাক্তার গম্ভীর মুখে বলিলেন, ভয় পাবেন না। উনি বাঁচবেন বৈ কি নিশ্চয় বঁচবেন । আশ্চৰ্য আশ্বাস, বিস্ময়কর মিথ্যা । ডাক্তারের মুখের কথা শেষ হইবার এক মিনিট পরেই ভয়ঙ্কর একটা কাশির ধমকে একেবারে আধ্যবসা অবস্থায় উঠিয়া অন্ধের মৃত দেহটা আবার শুইয়া *ख्लि । একবার পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াই ডাক্তার নীরবে বাহির হইয়া গেলেন । সকলে নীরব। প্ৰত্যেকের নিশ্বাসের শব্দ যেন শোনা যায়। অকস্মাৎ এই স্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া দৈত্য হাউ হাউ করিয়া উঠিল। ঠিক যে কান্না তাহা নয়, এক প্ৰকার দুর্বোধ্য ভয়ের শব্দ, আতঙ্ক-ভরা আতি । পাড়ার কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন, হেরম্ব একজনকে নিম্নস্বরে বলিল, ও লোকটি মুসলমান, ঘর থেকে বের করে দিন। বাহিরে যাওয়ার আদেশটা দৈত্য প্ৰথমে বুঝিতে পারিল না, বোঝা মাত্র তীর বেগে বাহির হইয়া গেল। প্ৰভা দরজার কাছে দাড়াইয়াছিল, ”ভিতরে আসিয়া রাধার পাশে বসিয়া VNOR