পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RS বিবেক ব্যাগ রাখিবার সময় শ্ৰীনিবাস বসিয়াছিল। ঘর এত বেশী অন্ধকার নয় যে, চামড়ার একটা মনিব্যাগ চোখে পড়িবে না। তবে তক্তাপোশের নিচে বেশ অন্ধকার। আলো জালিয়া তক্তাপোশের নিচে আয়নায় প্ৰতিফলিত আলো ফেলিয়া খোজা হইল । মেঝেতে চােখ বুলাইয়া কতবার যে শ্ৰীনিবাস সমস্ত ঘরে পাক খাইয়া বেড়াইল! ঘনশ্যামের সঙ্গে তিনবার পথে নামিয়া দু’টি বাড়ির পরে পান বিড়ির দোকানের সামনে পর্যন্ত খুজিয়া আসিল! তারপর তক্তাপোশে বসিয়া পড়িয়া মরার মত বলিল, ‘কোথায় পড়ল। তবে ? এইটুকু মোটে গেছি, বিড়ির দোকান পৰ্যন্ত। এক পয়সার বিড়ি কিনব বলে পকেটে হাত দিয়েই দেখি ব্যাগ নেই।” ঘনশ্যাম আরও বেশী মরার মত বলিল, “রাস্তায় পড়েছে মনে হয়। পড়ামাত্র হয়ত কেউ কুড়িয়ে নিয়েছে।” “তই হবে। কিন্তু এইটুকু সময়ের মধ্যে রাস্তায় পড়ল, একজন কুড়িয়ে নিল! পকেট থেকে পড়বেই বা কেন তাই ভাবছি।” ‘যখন যায়, এমনিভাবেই যায়। শনির দৃষ্টি লাগলে পোড়া শোল মাছ পালাতে পারে ।” ‘তাই দেখছি। বিনা চিকিৎসায় ছেলেটা মারা যাবে।” ঘনশ্যামের মুখের চামড়ায় টান পড়িয়া সিরসির করিতে থাকে। অশ্বিনীর সোনার ঘড়িটা পকেটে ভরিবার পর এমনি হইয়াছিল। এখনও ব্যাগটা ফিরাইয়া দেওয়া যায়। অসাবধান বন্ধুর সঙ্গে এটুকু তামাশা করা চলে, তাতে দোষ হয় না। তবে দশটা টাকা দিলেও ডাক্তার নিয়া গিয়া ও ছেলেকে দেখাইতে পারিবে । দশ টাকায় মণিমালার যদি চিকিৎসা হয়, ওর ছেলের হইবে না কেন । শ্ৰীনিবাস নীরবে নোটট ফিরিয়া নিল। পকেটে রাখিল না, মুঠা করিয়া ধরিয়া বসিয়া রহিল। সমান বিপন্ন বন্ধুকে খানিক আগে যাচিয়া যে টাকা দিয়াছিল সেটা ফিরাইয়া নেওয়ার সঙ্গতি অসঙ্গতির বিচার হয়ত করিতেছে। নিরুপায় দুঃখে, ব্যাগ হারানোর দুঃখ নয়, এই দশ টাকা ফেরত নিতে হওয়ার দুঃখে, হয়ত ওর কান্না আসিবার উপক্রম হইয়াছে। ওর পক্ষে কিছুই আশ্চৰ্য নয়। ঘনশ্যাম মমতা বোধ করে। ভাবে, মিছামিছি। ওর মনে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। ‘গোটা পচিশোক টাকা যোগাড় করতে পায়বী শ্ৰীনিবাস।” “পারবি ? বঁচা গেল। আমি তাই ভাবছিলাম। সস্তুর মায় চিকিৎসা না করলেও ত চলবে না ।” O) artfürks (RCwrlwytG35 o