পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি SVS আমি বললাম, পাড়ার লোকে কী অপবাদ দিয়েছে মামা ? অতসী মমির দিকে চেয়ে যতীন মামা হাসলেন, বলব নাকি ভাগনেকে কথাটা অতসী? পাড়ার লোকে কী বলে জানো ভাগনে ? বলে অতসী আমার বিয্যে করা বউ নয় ---চোখের পলকে হাসি মুছে রাগে যতীন মামা গরগর করতে লাগলেন, লক্ষ্মীছাড়া বজাত লোক পাড়ার, ভাগনে! রীতিমতো দলিল আছে বিয়ের, কেউ কি তা দেখতে চাইবে ? যত স --- ত্ৰস্তভাবে অতসী মামি বললে, কী যা-তা বলছ? যতীন মামা বললেন, ঠিক ঠিক, ভাগনে নতুন লোক, তাকে এ সব বলা ঠিক হচ্ছে না বটে। ভারী রাগ হয়। কিনা! বলে হাসলেন। হঠাৎ বললেন, তোমরা যে কেউ কারু সঙ্গে কথা বলছি না গো! মামি মৃদু হেসে বললে, কী কথা বলব ? যতীন মামা বললেন, এই নাও! কী কথা বলবে তাও কি আমায় বলে, দিতে হবে নাকি? যা হােক কিছু বলে শুরু কর, গড়গড় করে কথা। আপনি এসে যাবে। মামি বললে, তোমার নামটি কী ভাগনে ? যতীন মামা সশব্দে হেসে উঠলেন। হাসি থামিয়ে বললেন, এইবার ভাগনে, পালটা প্রশ্ন কর, আজি কী রাধবে মামি? ব্যস, খাসা আলাপ জমে যাবে। তোমাব আরম্ভটি কিন্তু বেশ অতসী। মামির মাখ লাল হয়ে উঠল। আমি বললাম, আমন বিশ্ৰী প্রশ্ন আমি ককখনো করব না মামি, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আমার নাম সুবেশ। সতীন মামা বললেন, সুরেশ কিনা সুরের বাজা, তাই সুর শুনতে এত আগ্রহ। নয় ভাগনে ? হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ইস! ভুবনবাবু যে টাকা দুটাে ফেরত দেবে বলেছিল আজি! নিয়ে আসি, দুদিন বাজাব হযনি। বসো ভাগনে, মামির সঙ্গে গল্প করো, দশ মিনিটেৰ ভেতর আসছি। ঘরের বাইবে গিয়ে বললেন, দোবটা দিয়ে যাও অতসী। ভাগনে ছেলেমানুষ, কেউ তোমার লোভে ঘরে ঢুকলে ঠেকাতে পারবে না। মামিব মুখ আবক্ত হয়ে উঠল এবং সেটা গোপন করতে চট কবে উঠে গেল। বাইরে তার চাপা গলা শুনলাম, কী যে বসিকতা কব, ছি! মামা কী জবাব দিলে- শোনা গেল না। মামি ঘরে ঢুকে বললে, ওই রকম স্বভাব ওঁব। বাকসে দুটি মোটে টাকা, তাই নিয়ে সেদিন বাজার গেলেন। বললাম, একটা থাক। জবাব দিলেন, কেন? রাস্তায় ভুবনবাবু চাইতে টাকা দুটি তাকে দিয়ে খালি হাতে ঘবে ঢুকলেন। আমি বললাম, আশ্চর্য লোক তো! মামি বললে, ওই রকমই। আর দাখো ভাই— বললাম, ভাই নয়, ভাগনে। মামি বললে, তাও তো বটে! আগে থাকতেই যে সম্বন্ধটা প’লি যে বসে আছি ! ওঁব ভাগনে না। হয়ে আমার ভাই হলেই বেশ হত। কিন্তু। সম্পর্কটা নতুন করে পাতো না? এখনও এক ঘণ্টাও হযনি, জমাট বাধেনি। আমি বললাম, কেন ? মামি-ভাগনে বেশ তো সম্পর্ক! মামি বললে, আচ্ছা। তবে তাই। কিন্তু আমার একটা কথা তোমায় রাখতে হবে ভাগনে। তুমি ওঁর বঁশি শুনতে চেয়ে না। বললাম, তার মানে ? বাঁশি শুনতেই তো এলাম! মামির মুখ গভীর হল, বললে, কেন এলে? আমি ডেকেছিলাম? তোমাদের জ্বালায় আমি কি গলায় দড়ি দেব?