পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in S\S) Sq, মানিক রচনাসমগ্ৰ আমি অবাক হয়ে মামির মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। কথা জোগায় না। মামি বললে, তোমাদের একটু শখ মেটাবার জন্য উনি আত্মহত্যা করছেন দেখতে পাও না ? রোজ তোমরা একজন না। একজন এসে বঁাশি শুনতে চাইবে। রোজ গলা দিয়ে রক্ত পড়লে মানুষ কদিন বঁাচে! ३@ ! রক্ত নয়? দেখবো? বলে মামি চলে গেল। ফিরে এল একটা গামলা হাতে কবে । গামলার ভেতরে জমাটি-বাঁধা খানিকটা রক্ত । মামি বললে, কাল উঠেছিল, ফেলতে মায়া হচ্ছিল তাই রেখে দিয়েছি। রেখে কোনো লাভ নেই জানি, তবুSumitaBot (আলাপ) আমি অনুতপ্ত হয়ে বললাম, জানতাম না মামি। জানলে ককখনো শুনতে চাইতাম না। ইস, এই জন্যেই মামার শরীর এত খারাপ ? মামি বললে, কিছু মনে করো না ভাগনে। অন্য কারও সঙ্গে তো কথা কই না, তাই তোমাকেই গায়ের ঝাল মিটিয়ে বলে নিলাম। তোমার আর কী দোষ, আমার অদৃষ্ট ! আমি বললাম, এত রক্ত পড়ে, তবু মামা বাঁশি বাজান ? মামি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললে, হাঁ্যা, পৃথিবীর কোনো বাধাই ওঁর বঁশি বাজানো বন্ধ করতে পারবে না। কত বলেছি, কত কেঁদেছি শোনেন না। আমি চুপ করে রইলাম। মামি বলে চলল, কতদিন ভেবেছি বাঁশি ভেঙে ফেলি, কিন্তু সাহস হয়নি। বাঁশির বদলে মদ খেয়েই নিজেকে শেষ করে ফেলবেন, নয়তো যেখানে যা আছে সব বিকি করে বাঁশি কিনে না খেয়ে মরকেন । *ց মমির শেষ কথাগুলি যেন গুমরে গুমরে কেঁদে ঘরেব চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে লাগল। আমি কথা বলতে গেলাম, কিন্তু ফুটিল না। মামি একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললে, অথচ ওই একটা ছাড়া আমার কোনো কথাই ফেলেন। না। আগে আকণ্ঠ মদ খেতেন, বিয়ের পর যেদিন মিনতি করে মদ ছাড়তে বললাম। সেইদিন থেকে ও জিনিস ছোঁয়াই ছেড়ে দিলেন। কিন্তু বাঁশির বিষয়ে কোনো কথাই শোনেন না। আমি বলতে গেলাম, মামিমামি বোধ হয় শুনতেই পেল না, বলে চলল, একবার বঁশি লুকিয়ে রেখেছিলাম, সে কী ছটফট করতে লাগলেন ? যেন ওঁর সর্বস্ব হারিয়ে গেছে। বাইরে কড়া নাড়ার শব্দ হল। মামি দরজা খুলতে উঠে গেল। যতীন মামা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, দিলে না। টাকা অতসী, বললে পরশু যেতে। পিছন থেকে মামি বললে, সে আমি আগেই জানি। যতীন মামা বললেন, দোকানদারটাই বা কী পাজি, একপো সুজি চাইলাম, দিল না। মামার বাড়ি এসে ভাগনেকে দেখছি খালি পেটে ফিরতে হবে। মামি স্নান মুখে বললে, সুজি দেয়নি ভালোই করেছে। শুধু জল দিয়ে তো আর সুজি হয় না। ঘি নেই ? কবে। আবার ঘি আনলে তুমি ? তাও তো বটে ! বলে যতীন মামা আমার দিকে চেয়ে হাসলেন। দিব্য সপ্রতিভ হাসি।