পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অতসী মামি



মেয়েটি বললে, "এত দূর থেকে দেখতে আপনার বোধ হয় অসুবিধা হচ্ছে, ঘাটের পাড়েই চলুন না ? আমার মানের এখনও বাকি আছে।" "আমায় বলছেন ?" দ্বিতীয় ব্যক্তি তো কাবুকে দেখছি না। এখানে। আপনি ভদ্রলোকের ছেলে, আপনাব যদি এ রকম প্রবৃত্তি-রাগে দুঃখে মেয়েটির কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে গেল। ছেলেটি অকৃত্রিম বিস্ময়ে তার মুখের দিকে চেয়ে রইল । মেয়েটি আবােব বললে, "আর একদিন আপনি উঁকি মারছিলেন, কিছু বলিনি, কিন্তু এ আপনার কোন দেশি ভদ্রতা ? আপনার বাধে না, কিন্তু আমরা লজ্জায় মরে যাই। মানুষকে এত নীচ ভাবতেও যে কষ্ট হয়!" বিবৰ্ণ মুখে ছেলেটি বললে, এ সব আপনি কী বলছেন ? আমি--- ন্যাকামি! ছেলেটিব মুখ দেখে মন একটু নরম হয়েছিল, এই ন্যাকামিতে আবার কঠিন হয়ে গেল। কটুকণ্ঠে বললে, অন্যায় বলেছি। দুচোখ বড়ো বড়ো করে দেখুন, আপনাকে আমি লজ্জা করব না। স্নানের সময় গোরু মহিষও তো মাঝে মাঝে জল খেতে আসে । ঘুরে দাঁড়িয়ে পা বাড়াল। পেছনে ব্যাকুল কণ্ঠ শোনা গেল, দাঁড়ান। মেয়েটি ফিােল দর্পণ নালন। আমায বিশ্বাস করুন, আপনি স্নান করছিলেন আমি তো দেখিনি। আর একদিনেব কথা বললেন, কিন্তু আমি কাল মোটে কলকাতা থেকে এখানে এসেছি। আশেপাশে যদি দু-একটা পাখি মেলে এই আশায় সকালে বন্দুকটা নিয়ে বেরিয়েছিলাম। একটা ঘুঘু, এই দিকে উড়ে এসেছিল, কোথায বসল। তাই দেখছিলাম, আপনাকে নয়। হাতের বন্দুকটা দেখিয়ে বললে, এটা দেখে আপনার বিশ্বাস হওয়া উচিত। পিছন ফিবে ঘাটের দিকে চলতে চলতে মেযেটি বললে, ন্যাকামি করবেন না, আমি কচি খুকি নই। ছেলেটিব মুখ কালো হয়ে গেল। সকালবেলার উজ্জ্বল আলো পর্যন্ত যেন এক সুন্দাবী তবুণীর দেওয়া কুৎসিত অপবাদের ছাপে মলিন হয়ে উঠল। ছেলেটি নিশ্বাস ফেলে সরে গেল। পলাতক ঘুঘুটা চোখের সামনে দিয়ে উড়ে গিয়ে কাছেই একটা ডালে বাসল, বন্দুক তুলতে ইচ্ছা হল না। আঁকাবঁকা সরু পথটি ধবে বাগান পার হয়ে খিড়কির দবাজা দিয়ে সাদা বাড়িটায় ঢুকল। বন্দুকটা বড় ঘরের কোণে ঠেস দিয়ে রেখে বিরস মুখে খাটের একাধারে বসে পড়ল। মা বললেন, "কী শিকার কারলি বে অশোক ?" "অপবাদ ।" "অপবাদ ?" "হুঁ", বলে খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে অশোক বলছে, "গায়ের মেয়েগুলি ভারী ঝগড়াটে হয়, না মা ?" "কারু সঙ্গে ঝগড়া করে এলি নাকি?" অশোক বললে, আমায় করতে হয়নি, একই করেছে। বাবু স্নান কর ছিলেন, ঘুঘু খুঁজতে যেই পুকুরপাড়ে গেছি, জল থেকে উঠে এসে যা মুখে এল শুনিয়ে দিল। ওত পেতে ছিল বোধ হয়। বাপ, থাকো তোমরা এখানে, কাল আমি কলকাতা চম্পট দিচ্ছি। মা বললেন, কোন পুকুর ? বাগানের ভেতরেরটা ?