পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in >brの মানিক রচনাসমগ্র শিপ্রা বলে, বালিগঞ্জের দিকে ছোটাে একটি বাড়ি ভাড়া নেব অনি। প্রত্যেক শনিবার বিকেলে হােস্টেল থেকে গিয়ে সোমবার পর্যন্ত তুই আমার কাছে থাকিবি। অনিন্দিতা সরলভাবে জিজ্ঞাসা করে, তোমাদের খরচ চলবে কী করে? এখানে না থাকলে মন্টুর বাবা একটি পয়সা দেবেন না। শিপ্রাও সরলভাবে হেসে বলে, বিয়ের পর আমি কি মন্টুকে ভেসে বেড়াতে দেব রে অনি! ওকে তুই একেবারে চিনতে পারিসনি। দায়িত্ব দিলেই ও দায়িত্ব নেবে। মাসে তিন-চারশো টাকা ও রোজগার করতে পারে। এ সব লোভ দেখিয়েছে নাকি? দেখিয়েছে। কিন্তু তুই যা ভাবছিস তা নয় অনি। এ সব শুধু লোভ-দেখানো হলেও শিপ্রা ঠকবে না। একমাস করে আমি এখানে থাকলে বুড়ো খুশি হয়ে এগারো মাস কলকাতায় থাকার খরচ দেবে। ছেলের বউ দুবার পায়ের ধুলো নিলে সিন্দুকের চাবি পর্যন্ত তার অাঁচলে বেঁধে না দিয়ে রাত্রে ওঁর ঘুম হবে ভাবিস? মন্টুর বাবাকেও তুই চিনতে পারিসনি অনি। অনিন্দিতা বলে, চিনতে আমি কাবুকেই পারি না শিপ্রাদি। তোমাকেও নয়। শিপ্রা সস্নেহে তার কাধে হাত রাখে, ছলছল চোখে তাকিয়ে মিষ্টি মোলায়েম গলায় বলে, এবারটা ঠিকেই শেখ অনি। জীবনে আর ভুল হবে না। আমি তোর টিচার ছিলাম, আমার কাছে শিখতে দোষ কী ? অনিন্দিতা কঁধ থেকে তার হাত নামিয়ে আঙুলগুলি মুঠো করে ধরে। হাসিমুখে বলে, তোমায় ভালোরকম গুরুদক্ষিণা দেব শিপ্রাদি। শিপ্রা বলে, আমার সঙেগ কনসাল্ট করে দিস। দু জায়গা থেকে এক রকম প্রেজেন্ট পেলে বিশ্ৰী লাগে।--ছাড়, হাত ছােড়। আংটিটা বিধছে। অনিন্দিতার মুষ্টির চাপে পরাশরের দেওয়া আংটিতে শিপ্রার দুটি আঙুল গর্ত হয়ে কেটে যায়। কয়েক ফেঁটা রক্তেরও আবির্ভাব হয়। AV শিপ্রা একটু হেসে বলে, তুই খুব সরল অনি। তাই বড়ো বোকা । অনিন্দিতা বোকা না হলেও শিপ্রা যে বুদ্ধিমতী দু একদিনের মধ্যে তার আরও একটি পরিচয় পাওয়া যায়। শিপ্রা রক্তকরবীর রিহার্সেল বন্ধ করে দেয়। পরাশর তার মত পরিবর্তনের চেষ্টা করে। সে পরাশরের অবাধ্য হয়। পরাশর রাগ করে। সে নির্বিকার হয়ে থাকে। বলে, ও সব ছেলেমানুষি "ভালো নয় । যে দৃষ্টি দিয়ে মানুষ বিপদের পরিমাপ করে শিপ্রাকে সেই দৃষ্টিতে ঈষৎ ভীতা করে তুলে পরাশর বলে, তুমি শেষ পর্যন্ত অনিন্দিতা হয়ে উঠবে না তো শিপ্রা? শিপ্রা থাকাই সহজ। শিপ্রার এই আশ্বাসকে অনিন্দিতা যেচে সমর্থন করলে। পরাশরকে সে অভয় দিয়ে বললে যে শিপ্রার যতটুকু স্বাভাবিক সেটুকু কৃত্রিম, পরাশরেব চিন্তার কারণ নেই। কোকিনদে এসে শিপ্রা পাগল হয়ে গিয়েছে। একবার পাগল হয়ে মানুষ যদি বা মাঝে মাঝে শ্রান্ত হয়ে পাগলামি স্থগিত রাখেপাগলামি তার জীবনে কখনও ঘোচে না। চিরজীবন উন্মদিনী থেকে শিপ্রা পরাশরের জীবনকে ভরপুর করে রাখবে। পরাশর সভয়ে বললে, তোমার এ মন্তব্যে sarcasm নেই তো অনি! না। খাঁটি শুভানুধ্যায়ীর মন্তব্য বলে গ্রহণ করো। পরাশর আত্মগোপন করে বললে, জীবনটা তাহলে জমবে।