পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SS O মানিক রচনাসমগ্ৰ তিন বছর ধরিয়া বান্ধবী ও বন্ধু যে অবস্থায় উপনীত হইয়াছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাহা যেন ঠিক ধারণা করিয়া উঠিতে পারা যায় না। কেতকীর চুলে যে মড়ক লাগিয়াছে খানিক আগে অনন্ত তাহা লক্ষ করিয়াছিল। কী আগুন জ্বলিতেছে। ওর মাথায় কে জানে? তালু কতখানি তপ্ত হইয়া ওঠায় চুল ঝরিয়া পড়িতেছে, ওর মাথায় হাত দিয়া তাহা অনুভব করিবার জন্য হঠাৎ একসময় অনন্তর মন কেমন করিয়া ওঠে। কিশোর বয়সে কেতকী একদিন তাহার পায়ে ভূমিষ্ঠ প্ৰণাম করিয়াছিল। অনেক দিনের কথা। কেন প্ৰণাম করিয়াছিল। আজি মনে পড়ে না, বোধ হয় কোনো কারণ ছিল না। আশীর্বাদ করিতে সেদিন যে খেয়াল থাকে নাই, সে কথাটা স্পষ্টই মনে পড়ে। বিদায় নেওয়ার সময় এবার যদি কেতকী প্ৰণাম করে—অকারণেই প্ৰণাম করে-প্ৰণাম করিতে হয় বলিয়া নয়,-মাথায় হাত রাখিযা সে আশীর্বাদ করিবে। ইহার কল্যাণের কোন পথটা আজ খোলা আছে? মনে মনেও কোনো আশীর্বাচন উচ্চারণ কবিলে আজ ব্যঙেগর মতো শোনাইবে না ? কেতকী কথা কহিল। সূর্য ডুবতে না ডুবতে পুব দিকে কী মেঘ করে এলো দাখো! রাত্রে বোধ হয় খুব ঝড় হবে। কী ধূমসে কালো মেঘা! অনন্ত বলিল, ঝড় হবে বলছ কেন? শুধু বৃষ্টিও তো হতে পারে! কেতকী মুখ ফিরাইয়া হাসিয়া বলিল, তা নিশ্চয় পারে, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ঝাড হবে। তা ছাড়া কী গমোট করেছে দেখেছ? আমি রীতিমতো ঘামছি । কান পাতিয়া শুনিয়া বলিল, বাইরে কারা কথা বলছে? দেখি-- বাহিরে গিয়া অনন্ত দেখিল শঙ্কর বারান্দায় দাঁড়াইয়া আছে, বাবান্দার নীচে যুক্ত করে দুজন কৃষকশ্রেণির লোক। একজন একটি কৃষ্টপুষ্ট পাঠার গলবৰ্জ্জু ধরিয়া আছে। শঙ্কর আপনা হইতে বলিল, রাত্রে মার কাছে বলি হবে অনন্ত। জোড়া-পাঠা বলি দেওয়াই নিয়ম, কিন্তু বলির কথা সাবাদিন স্রেফ ভুলেছিলাম, অসময়ে লোক পাঠিয়ে একটাব বেশি পাওয়া গেল না। সমস্ত রাত্রি আজ পুজো করব। কালীপুজো ? শঙ্কর প্রশান্ত হাসি হাসিল,—তোমরা বেটিকে কালী বলেই জানো, আমবা বলি শক্তি। যাব প্ৰলয়ংকরী শক্তির সংযমে সৃষ্টির স্থিতি। এক স্তনে বিয সঞ্চিত রেখে অন্য স্তনের অমৃতে যে জগৎকে পালন করছে। ওই পাঁঠাটিকে ছাড়া। মহাজ্ঞানীর মতো মুখ করিয়া শঙ্কর বলিল, ধ্বংস তুমি চেনো না অনন্ত, মৃত্যুর স্বরূপ কিছুমাত্র বোঝে না। মারা ভান্ডার থেকে কী কিছু হারায়? যে পোকাটিকে তুমি না জেনে পায়েব নীচে পিযে দাও, সেও না। আজ পাঠটির বলি হবে, কাল কি মা আবার ওকে পালন করবেন না ? বলিয়া বারান্দাল নীচে নামিয়া শঙ্কর যেন সস্নেহেই পাঁঠাটির গলদেশ চুলকাইয়া দিতে লাগিল। কিছুক্ষণ নীরবে তাহার কাণ্ড দেখিয়া অনন্ত প্রশ্ন করিল, কিন্তু একাদশীর দিন কি কালীপুজো श्श १ মাির পুজোর আবার তিথি অ-তিথি কী হে সাহেব ? মুখ না ফিরাইয়াই শঙ্কর এই জবাব দিল। তা বটে ;