পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in S>や2 মানিক রচনাসমগ্ৰ হিমানী নতমুখে অস্বাভাবিক গলায় বলিল, শুনলে আপনি লজ্জা পাবেন, ও যে আমার প্রাপ্য। প্ৰত্যেকটি মেয়ের জন্য ভগবান নির্দিষ্ট ব্যথা মেপে রাখেন, মাথা পেতে নিজেব ভাগ নিতেই হবে। ব্যথার এক বুপ এড়িয়ে গেলে অন্যরূপে দেখা দেবেই। কী অদ্ভুত মন্তব্য ! সংকোচে নয় মন্তব্যের ভরে শঙ্কর মাথা হেঁট করিল। কথাগুলি যেন এক বোঝা অভিযোগ-একটি সুদীর্ঘ জীবনের ব্যর্থতার মতো অসম্ভব ভারী। কিন্তু শয্যাশাযিনী। ওই সংক্ষিপ্ত মানবীটির অভিযোগও তো নিখিল মানবতাব ইতিকথায় প্রক্ষিপ্ত নয়! ওর বুকের দৃশ্যমান পাজরা, ওর কালিপড়া চােখের অত্যধিক স্নেহেব কালো ছানি, ওর জীবনযাত্রার অধিকাৰীর অন্তহীন বঞ্চনার তবে মানে কী? ভগবানের মাপিয়া রাখা বাথার ভাগের সঙ্গে মানুষের গুজিয়া দেওয়া ব্যথায্য ওর শিরায় বক্তের রংও বুঝি ফ্যাকাশে হইয়া গিয়াছে। হিমানীর কথাটা সে বুঝিল, না বোঝােব মতো করিযা। ও নিতা অপবাস্তুে বকুলতলায় স্বামীব সঙ্গে চা পান কবিতে পায়। ভোরবেলা মোটবে চাপিয়া লোকালয় ছাড়িয়া গিয খোলা মাঠেব মাঝখানে নির্জন পথপ্রান্তে ক্ষণকাল বিশ্রাম করে। লক্ষ্য ছাপানো মনের সঙ্গে নিত্য ওর ঘনিষ্ঠতা জন্মে, --আঙুলের সোনার কাঠি দিযা সেতাবেব ঘুমন্ত বাগরাগিণীর ও ঘুম ভাঙায়। গন্ধতেলে খোঁপা বঁধে, সাবান মাখিয়া স্নান করে। ঘরে পরিযা বেনারসি ছিড়িয়া ফেলে। বিধুর কী আছে? সহানুভূতির অভাব ছিল না। কিন্তু হিসাবে হিমানীর হার হইল। সুকান্ত ডাক্তাব নিযা ফিরিবার পূর্বে বিধুর জ্ঞান হইল। বক্তবর্ণ চােখ মেলিয়াই সকলকে চমকাইয়া দিয়া চেঁচাইয়া উঠিল। হিমানীর হাত হইতে দুইটা আইসব্যাগই খসিযা পড়িল। ছোটাে খোকা ঘুম ভাঙিয়া করুণ সুবে কঁদিতে লাগিল। শঙ্কর ধড়মড় করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল । বিধুর আর্তনাদের শব্দার্থ এই ; মাগো এ ডাইনি কে। খোকা! ওবে খোকৃা! বার কয়েক গলা চিরিষা খোকাকে ডাকিয়া সে দিব্য সুর করিয়া কঁদিতে আরম্ভ করিয়া দিল, খোকারে । হিমানী আইসব্যাগ দুটি তুলিয়া আবার মাথায় চাপিয়া ধরিল। খানিক পরে শ্রান্ত হইয়া বিধু বোধ হয়। ঘুমাইয়াই পড়িল । হিমানী জিজ্ঞাসা করিল, খোকা কোনটি ? নেই । নেই । নাঃ। ওব মনে থাকতে পারে, পৃথিবীতে নেই। জ্যোৎস্না রাতে খোকা একদিন ছাত থেকে পাকা হিমানী চমকিয়া বলিল, সত্যি ? হ্যা। জ্যোৎস্না উঠলেই খোকাকে নিয়ে ও ছাতে উঠিত কেন কে জানে। রান্নার ফাঁকে ফঁাকে কতবার যে ছুটে যেত ঠিকানা নেই, জিজ্ঞাসা করলে বলত, জ্যোৎসা দেখতে ভালো লাগে। ও কথা সত্যি নয়।--হিমানীর কণ্ঠে কাতরতা। তা ঠিক। জ্যোৎস্না দেখে ওর ভালো লাগা অসম্ভব। কিন্তু কেন যে উঠত ভেবে পাই না। মুখ আড়ালে রাখিয়া হিমানী নীরব হইয়া রহিল। তেল কমিয়া গিয়াছিল, বার কয়েক দপদপ করিয়া আলোটা নিভিতে আরম্ভ করিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর শঙ্কর যখন তেলের বোতলটা নিয়া