পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in মানিক রচনাসমগ্ৰ ܓ9ܔ লষ্ঠানে তেল আছে শ্যামা। শ্যামা একবার ভাবিল, চুপ করিয়া থাকিয়া রাগ আর অভিমান দেখায়। কিন্তু সাহস পাইল না। একটুখানি আছে। বাবা। पुचळ्न उठ८ ।। নিভা জিজ্ঞাসা করিল, লণ্ঠন কী হবে ? সরকারদের বাড়ি যাব। ফের চেপে বৃষ্টি এল দেখছি না? যেন সরকাবদের বাড়ি যাইতে নিভই আপত্তি করিয়াছিল। শ্যামা বলিল, দেশলাই কোথা রাখলে মা ? নিভা বলিল, দেশলাই ? কেন, পিদিম থেকে বুঝি লণ্ঠন জ্বালানো যায় না? চোখের সামনে পিদিম জুলছে, চোখ নেই ? নীলমণি বলিল, ওব কি জ্ঞান-গৰ্ম্মি কিছু আছে ? নিজের মুখের কথাগুলো খচখচ কবিয়া মনের মধ্যে বেঁধে ! এ যেন তোতাপাখির মতো অভাবগ্রস্তের মানানসই মুখস্থ বুলি আওড়ানো। বলিতে হয় তাই বলা ; না বলিলে চলে না। সত্য ; সাত বছরেব পুরানো লণ্ঠন জ্বালানো হইল। নিভা মাথা নাড়িয়া বলিল, না বাপু, ছাতিতে আটকাবে না। আর একখানা কাপড় জড়িয়েনি। দে তো শামা, শুকনো কিছু দে তো। আর এক কাজ কবি--দুটাে তিনটে কাপড় পুটলি কবে নে। ওখানে গিয়ে সব্বাইকে কাপড় ছাড়তে হবে। আমার দোক্তার কীেটাে নিস। নীলমণি একটু মিষ্টি করিয়াই বলিল, ঠুকোটা নিতে পারবি শ্যামা ? লক্ষ্মী মা-টি আমার, – পারবি? জল ফেলেই নে না, ওখানে গিয়ে ভরে নিলেই হবে। জলেব কী অভাব!-অমাকিটুকু ফেলে যাসনে ভুলে। সব ব্যবস্থাই হইল, নিমুব কান্নায় কৰ্ণপাত না করিয়া তাকে টানিয়া হেঁচড়াইয়া দাঁড করাইযা দিয়া পিঠে একটা ছেঁড়া চটেব বস্তা চাপাইয়া দেওয়া হইল। দরজা খুলিযা তাবা উঠানে নামিয়া গেল। উত্তরের ভিটার ঘরখানা গত বৎসরও খাড়া ছিল, এবারকার চতুর্থ বৈশাখী ঝড়ে পড়িয়া গিয়াছে; সময়মতো অন্তত দুটি খুঁটি বদলাইতে পারিলেও এটা ঘটিত না। ভুলু বোধ হয় ওই ভগ্নস্তুপটির মাঝেই কোথাও মাথা গুজিয়া ছিল, মানুষের সাড়া পাইয়া বাহির হইযা আসিল । তখন ঘরের দরজায় তালা লাগানো হইয়া গিয়াছে। দরজা আচড়াইয়া ভুলু সকরুণ কান্নার সঙ্গে কুকুবের ভাষায় বলিতে লাগিল, দরজা খোলো দরজা খোলো। বাড়ির সামনে একহাঁটু কাদা, তার পরেই পিছল এঁটেল মাটি। ছেলে লইয়া আছাড় খাইতে খাইতে বঁচিয়া গিয়া নিভা দেবতাকেই গাল দিতে আরম্ভ করিয়া দিল। কষ্ট নীলমণিরই বেশি, শুকনো ডাঙাতেই বঁ৷ পায়ের পদক্ষেপটি তাকে চট করিয়া ডিঙাইয়া যাইতে হয়,-“এখন তার পা আর লাঠি দুই-ই কাদায় ঢুকিয়া যাইতে লাগিল। লাঠি টানিয়া তুলিলে পা আটকাইয়া থাকে, পা তুলিলে লাঠি পোঁতা হইয়া যায়। নিভার তাকাইবার অবসর নাই। শ্যামার ঘাডে কাপড়ের পুঁটুলি, হঁক-কলকি, লণ্ঠন আর নিমুর ভার। তবু শ্যামাই নীলমণির বিপদ উদ্ধার করিয়া দিতে লাগিল। ঘোষেদের পুকুরটা পাক দিলে সরকারদের বাড়ি। পুকুরটা ভরিয়া গিয়া পাড় ছাপাইয়া উঠিয়াছে। পশ্চিম কোনাব প্রকাণ্ড তেঁতুল গাছটার তল দিয়া তিন-চার হাত চওড়া এক সংক্ষিপ্ত স্রোতস্বিনী