পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in দিবারাত্রির কাব্য 8ܓ)k তার কথােব মাধুর্যোব এক কণা বাষ্প হয়ে উড়ে যাযনি, তার কণ্ঠে শ্ৰান্তির আভাস দেখা দেযনি। তাব ইদারাব জলের মতোই সেও যেন জুডিয়ে আছে। বাইরের ঘরের ভিতর দিয়ে অন্দরের বারান্দা হয়ে হেরম্বকে সে একেবারে তার শোবার ঘরে নিয়ে গেল। যেতে যেতে হেরম্ব লক্ষ কবে দেখল, চারিদিকে একটা অতিরিক্ত ঘষামাজ পরিষ্কাব পরিচ্ছন্নতার ভাব। ঘর ও রোয়াকের ধোয়া মেঝে সবে শুকিয়ে উঠেছে, সাদা কালো দেয়ালে কোথাও একটু দাগ পর্যন্ত নেই। জলের বালতি, ঘটি-বাটি, বসবার আসন প্রভৃতি টুকিটাকি জিনিসগুলি পর্যন্ত কঠোর নিষ্ঠাৰ সঙ্গে স্বস্থানে অবস্থান করছে। স্থানভ্রষ্ট একটি চামচ ও বোধ হয় এ বাড়ির কোথাও আবিষ্কাব করা ম্যাবে না। ঘরে ঢুকে সুপ্রিয়া বলল, ওই ইজিচেযারটাতে বসে সবচেয়ে আরাম হয়। জামা খুলে কত হযে এলিযে পড়ুন। ছবিপোকা নেই, কামডাবে না। হেরম্ব জামা খুলে ইজিচেয়ারটাতে বসল। এলিয়ে পড়াবা দরকাব বোধ করল না। আমার আবামের আর কী ব্যবস্থা বেখেছিস বল তো ? সুপ্রিয়া সত্যসত্যই পাখা নিয়ে তাকে বাতাস করা শুরু করে বলল, আরামের ব্যবস্থার কথা আর বলবেন না, হেবিম্ববাবু। বিশ মাইলের মধ্যে চাটি পর্যন্ত কিনতে পাওয়া যায় না, এমন বুনো দেশ। যে কদিন থাকবেন, আপনাকে কষ্ট করেই থাকতে হবে।—সে একটু হাসল—তবে কষ্ট আপনি সহজেই অবহেলা করতে পাবেন, এই যা ভরসার কথা। নইলে মুশকিলে পড়তাম। সুপ্রিযাব এ ঘব সাজানো, ছবির মতো সাজানো। বিছানার ধবধবে চাদবো কোথাও একটি কুঞ্চন নেই, বালিশগলি নিটোল। দেযালের গায়ে পেরেকের শেষ গর্তটি চুনেব তলে অদৃশ্য হযেছে। এদিকে টেবিলে সুপ্রিযা ও তার স্বামীর প্রসাধন-সামগ্ৰীগুলির একটি কোনোদিনই হয়তো আর একটির গায়ে ঠেকে যাবে না, সেলাইয়েব কলেব ঢাকনিটি চিবদিন এমনি ধূলিহীন হয়ে থাকবে। প্রতিদিন সুপ্রিয়া কতক্ষণ ঘব সাফ করে আর গোছায় হেরম্ব কল্পনা করে উঠতে পারছিল না। সুপ্রিয়াব পাখািব বাতাসে স্নিগ্ধ হতে হতেও সে একটু অস্বস্তি বোধ করছিল। এক সময় একটু আচমকাই সে জিজ্ঞাসা করে বাসল, দোকানেব মতো ঘব সাজিয়েছিস কেন ? দোকানোবা মতো । দোকানেব মতো না হোক, বাড়াবাড়ি আছে একটু। তেবে ভালো লাগে ? কী জানি । কী জানি! ভালো লাগে কি না জানিসনে কী বকম ? অত বুঝিনে। মুদ্রাদোযেব মতো হযে গেছে! না করেই বা কী কবি বলুন ? সারাদিন একটা কিছু নিয়ে থাকতে হবে তো মানুষের ? একটা ছেলে দিয়ে ভগবান আবাব কেডে নিলেন। বই-টই পড়তে আমাৰ ভালো লাগে না। এই সবই করি। কিন্তু-সুপ্রিয়ার কথা বলার মধুর ভঙ্গি ফিরে এল, আমার কথা আগে কেন ? আগে বলুন আপনাব মা কেমন আছেন ? মা আশ্বিন মাসে স্বগে গেছেন । সুপ্রিয়া চমকে বলল, কী সর্বনাশ! তার দুচোখ সজল হয়ে উঠল। হেরম্ব বলল, মবাবাব আগে মা তোর কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন। সুপ্রিয়ার পাখা থেমে গিয়েছিল। আবার সেটা নাড়তে আরম্ভ কবে বলল, আমাকে বড়ো ভালোবাসতেন। আপনাকে হেরম্ববাবু বলার জন্যে সকলের কাছে গাল খেয়েছি, তিনি শুধু বলতেন, পাগলি মেযে।