পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in VBS মানিক রচনাসমগ্ৰ গাড়ি যেন চোখের আড়াল হইল না, শ্যামার ছেলের জুর বাড়িতে আরম্ভ করিল। ঝিকে দিয়া কই মাছ আনাইযা শ্যামা এ বেলা শুধু ঝোল ভাত রাধিবার আয়োজন করিয়াছিল, সব ফেলিয়া রাখিয়া দুরুদুবু বুকে অবিচলিত মুখে সে ছেলেকে কোলে করিয়া বসিল। নিয়তির খেলা শ্যামা বোঝে বইকী! মন্দার ভার এড়াইবার লোভে শীতলকে যাইতে দেওয়ার দুর্মতি নতুবা তাহার হইবে কেন? স্বামী আবার বিবাহ করিয়াছে বলিয়া মন্দা চিবকাল ভাইয়ের সংসারে পড়িয়া থাকিত এ আশঙ্কা শ্যামার কাছে এখন অর্থহীন মনে হইল। কঁধে শনি ভর না করিলে মানুষ ভবিষ্যতের একটা কাল্পনিক অসুবিধার কথা ভাবিয়া ছেলের রোগকে অগ্রাহ্য করে ? ছেলে যত ছটফট করিয়া কঁদিতে লাগিল অনুতাপে শ্যামার মন ততই পুড়িয়া যাইতে লাগিল। যেমন ছোটাে তাহার মন, তেমনই তাহার উপযুক্ত শাস্তি হইযাছে। তাহাব মতো স্বার্থপর হীনচেতা স্ত্রীলোকের ছেলে যদি না মবে তো মরিবে কার? একা সে এখন কী করে! ঠিক ঝি বাসন মাজিতেছিল। তাহাকে ডাকিয়া শ্যামা বলিল, খোকার বড়ো জ্বর হয়েছে সত্যভামা, বাবু বনগা গেলেন, কী হবে এখন ? ঝি শতমুখে আশ্বাস দিয়া বলিল, কমে যাবে মা, কমে যাবে।--ছেলেপিলের অমন জুব জ্বালা কত হয়, ভেবেনি। তুমি আজ কোথাও যেয়ে না। সত্যভামা। কিন্তু না গিয়া সত্যভামার উপায় নাই। সে ধবিতে গেলে স্বামীহীনা, কিন্তু তাহার চারটি ছেলে মেয়ে আছে। তিন বাডি কাজ করিয়া সে ইহাদের আহার জোগায়, শামাব কাছে বসিয়া থাকিলে তাহার চলিবে কেন ? সত্যভামার বড়ো মেয়ে রাণীব বয়স দশ বছর, তাহাকে আনিয়া শ্যামাব কাছে থাকিতে বলিযা সে সবকারদের কাজ করিতে চলিয়া গেল। বাণীব একটা চোখে আঞ্জিনা হইযাছিল, চোখ দিয়া তাহাব এত জল পড়িতেছিল যেন কাব্য জন্য শোক কবিতেছে। শ্যামা এবার একেবালে নিঃসন্দেহ হইযা গেল। এমন যোগাযোগ, এত সব অমঙ্গলেব চিহ্ন, একি ব্যর্থ যায় ? আজি দিনটা মেঘলা আছে। শীত পড়িয়াছে কনকনে। খোকার জ্বাবে তাপে শ্যামাব কোল যত গবাম হইয় ওঠে, হাতপা হইয়া আসে তেমনি ঠান্ডা। মাঝে মাঝে শ্যামার সর্বাঙ্গে। কঁপুনি ধরিয়া যায়। বেলা বারোটাব। সময় খোকার ভাঙাভাঙা কান্না থামিল। ভযে-ভাবনায় শ্যামা আধমরা হইয়া গিযাছিল, তবু তাহার প্রথম ছেলেকে হাবানোর শিক্ষা সে ভোলে নাই,--তাড়াতাড়ি নয, বাড়াবাড়ি নয, এ রকম উত্তেজনাব সময় ধীরতা বজায রাখা অনভ্যস্ত অভিনয়ের শামিল, শ্যামার চিন্তা ও কার্য দুই অত্যন্ত শ্লথ হইয়া গিয়াছিল। তিনবার থার্মেমিটাব দিয়া সে ছেলের সঠিক টেম্পারেচাব ধরিতে পারিল। একশো তিন উঠিয়াছে। জুর এখনও বাড়িতেছে বুঝিতে পাবিয়া রাণীকে সে ও পাড়ার হারাণ ডাক্তারকে ডাকিতে পাঠাইযা দিল। এতক্ষণে সে টের পাইয়াছে জ্বরের বৃদ্ধি স্থগিত হওয়ার প্রতীক্ষায় এতক্ষণ ডাক্তার ডাকিতে না পাঠানো তাহাব উচিত হয না। হারাণ ডাক্তার যেমন গম্ভীব তেমনই মন্থর। আজ যদি রোগী দেখিয়া ফিবিতে তাহার বেলা হইয়া থাকে, স্নান করি যা খাইয়া ব্যাপার দেখিতে আসিবে সে তিনঘণ্টা পরে। বাণী। কি রোগীর অবস্থােটা তাহাকে বুঝাইয়া বলিতে পরিবে ? সামান্য জ্বর মনে করিয়া হারাণ ডাক্তার যদি বিকালে দেখিতে আসা স্থির করে ? ছেলেকে ফেলিয়া রাখিয়া শ্যামা সদর দরজায় গিয়া পথেব দিকে তাকায়। রাণীকে দেখিতে পাইলে ডাকিয়া ফিরাইয়া একটি কাগজে হারাণ ডাক্তারকে কয়েকটি কথা লিখিয়া দিবে। রাণীকে সে দেখিতে পায় না। শুধু পাড়ার ছেলে বিনু ছাড়া পথে কেহ নাই। শ্যামা ডাকে, আ বিনু, অ! ভাই বিনু, শূনছ? কী? হারাণ ডাক্তারকে গিয়ে বলো গে—