পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী VOYS আমি পাবিব না।--বিনু বলে। শ্যামা বলে, ও ভাই বিনু শোনো, শোনো ভাই একবাব--- বাড়াবাডি ? সে উতলা হইয়াছে ? ঘরে গিয়া শ্যামা কঁাদে। দ্যাখে ছেলে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলিতেছে। চোখ বুজিয়া নিশ্বাস ফেলিতেছে। ও কি আর চোখ মেলিবে? হারাণ ডাক্তার দেবি না করিযাই আসিল। হারাণ যত মন্থর হোক, তার পুরানো নড়বড়ে ফোর্ড গাডিটা এখনও ঘণ্টায় বিশ মাইল যাইতে পারে। ভাত খাইয়া সে ধীরে ধীরে পান চিবাইতেছিল, ঘরে ঢুকিয়া সে প্রথমে চিকিৎসা করিল শ্যামার। বলিল, কেঁদো না বাছা। বোগনিৰ্ণয় হবে না। কেমন তাহার বোগনির্ণয কে জানে, খোকার গায়ে একবার হাত দিযাই তুকুম দিল, এক গামলা ঠান্ড জল, কলসি থেকে এনে । শ্যামা গামলায্য জল আনিলে হাবাণ ডাক্তার ধীরে ধীরে খোকাকে তুলিয়া গলা পর্যন্ত জলে ডুবাইয়া দিল, একতাতে সেই অবস্থায় তাহাকে ধবিদ্যা বাখিয়া অন্য হাতে ভিজাইয়া দিতে লাগিল তাহার মাথা। খোকাব মারি অনুমতি চাহিল না, এ রকম বিপজ্জনক চিকিৎসাব কোনো কৈফিযতও দিল না। শ্যামা বলিল, এ কা কবলেন ? হারাণ ডাক্তাব বলিল, শুকনো তোযালে থাকলে দাও, না থাকলে শুকনো কাপড়েও চলবে। শ্যামা বিষ্ণুপ্তিফণাৰ দেওযা একটি তোয়ালে আনিয়া দিলে জল হইতে তুলিয়া তোয়ালে জড়াইয়া খোকাকে হাবাণ শোয়াইয়া দিল। নাডি দেখিযা চৌকির পাশের দিকে সরিয়া গিয়া ঠেস দিল দেয়ালে। পান সে আজ আগাগোডা জাববী কাটিতেছিল, এবার বুজিল চোখ। শ্যামা বলিল, আমাব কী হবে ডাক্তারবাবুপ হারাণ রাগ কবিয়া বলিল, এই তো, এই তো তোমাদেব দোষ । কঁাদবার কারণটা কী হ’ল ? ওব আবেকটা বাৰ্থ দিতে হবে বলে বসে আছি বাছা, তোমাদের দিযে তো কিছু হবার জো নেই, খালি কাদতে জানে । হাবাণ বুডা হইযাছে, তাহাকে ডাক্তারবাবু বলিতে শ্যামাব কেমন বাধিতেছিল। রোগীর বাড়িতে ডাক্তাবেব চেযে, পর কেহ নাই, সে মানুষ নয়, সে শুধু একটা প্রয়োজন, তিতে ওষুধেব মতো সে একটা হিতৈষী বন্ধ। হাবাণকে পর মনে কবা কঠিন! তাহাকে দেখিয়া এতখানি আশ্বাস মেলে, অথচ এমনি সে অভদ্র যে আত্মায় ভিন্ন তাহাকে আব্ব কিছু মনে কবিতে কষ্ট হয । শ্যামা তাই হঠাৎ বলিল, আপনি একটু শোবেন বাবা ?--দেয়ালে ঠেস দিয়ে কষ্ট হচ্ছে আপনার। কষ্ট ? হাসিতে গিয হারাণ ডাক্তারেব মুখের চামড অনভ্যস্ত ব্যায়ামে কুঁচকাইয়া গেল, এতক্ষণে শ্যামাব দিকে সে যেন একটু বিশেষভাবে চাহিযা দেখিল, না মা, কষ্ট নেই, শোব- একেবারে বাড়ি গিযে শোব। দুটো পান দিতে পাব, বেশ কবে দোক্তা দিযে ? শ্যামা পান সাজিয়া আনিয়া দিল। এটুকু সে বুঝিতে পারিয়াছিল যে খোকার অবস্থা বিপজ্জনক, নহিলে ডাক্তার মানুষ যাচিয়া বসিয়া থাকিবে কেন ? এত জ্বরেব উপর জলে ডুবাইয়া চিকিৎসাও কী মানুষ সহজে করে। তবু শ্যামা অনেকটা নিশ্চিন্ত হইয়াছে সে তো ডাক্তারি বিদ্যার পরিচয় রাখে। না, সে জানে ডাক্তারকে। জীবনমরণের ভার যে ডাক্তার পান চিবাইতে চিবাইতে লইতে পারে, সেই তো ডাক্তার,—মবণাপন্ন ছেলেকে ফেলিযা এমন ডাক্তারকে পান সাজিয়া দিতে শ্যামা খুশিই হয়। পান আর এক খাবলা দোক্তা মুখে দিয়া হারাণ শীতলের কথা জিজ্ঞাসা করিল। আধঘণ্টা পরে খোকাব তাপ লইয়া বলিল, জ্বর বাড়েনি। তবু গাটা একবার মুছে দিই, কী বলে মা ? না, হারাণ ডাক্তার গভীর নয়। রোগীর আত্মীয়স্বজনকে সে শুধু গ্ৰাহ্য করে না, ওর মধ্যে যে তার সঙ্গে ভােব জমাইতে পারে বুড়া তার সঙ্গে কথা বড়ো কম বলে না। বাবা বলিয়া ডাকিয়া শ্যামা মানিক ১ম-৩