পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in wV মানিক রচনাসমগ্ৰ সন্ন্যাসে শচীমাতার মতোই তাহার ব্যাকুলতা জাগে। কাপড় তুলিয়া কুঁচাইয়া সে বিধানের হাতে দেয। বিধান কাপড়গুলি নিজে দুই কঁাধে জমা করে। কাপড় তোলা শেষ হইলে শ্যামা আলিসায় ভর দিয়া রাস্তার দিকে চাহিয়া বলে, কুলপি বরফ খাবি খোকা ? এমনই ভাবে কথা দিয়া পূজা করিয়া, কুলপি বরফ ঘুষ দিয়া শ্যামা ছেলের নীরবতা ভঙ্গ কবে। বিধান জিজ্ঞাসা করে, কুলপি বরফ কী করে তৈরি করে মা ? শ্যামা বলে, হাতল ঘোরায় দেখিসনি? বরফ বেটে চিনি মিশিযে ওরা ওই যন্ত্রটার মধ্যে রেপে হাতল ঘোরায়, তাইতে কুলপি বরফ হয়। চিনি তো সাদা, রং কী করে হয় ? একটু রং মিশিযে দেয়! কী রং দেয মা ? আলতার রং ? দুর!!! আলতাব রং বুঝি খেতে আছে? অন্য রং দেয়। दंठी ट्र१? গোলাপ ফুলের বং বার করে নেয়। গোলাপ ফুলেব রং কী করে বার করে মা ? শিউলি বেঁটার বং কী করে বার কবে দেখিসনি ? সেদ্ধ কবে, না ? शै। তুমি আলতা পর কেন মা ? পরতে হয় রে, নইলে লোকে নিন্দে করে যে। কেন ? এ কেনি-ব অন্ত থাকে না । বিধানের প্রকৃতির আর একটা অদ্ভুত দিক আছে, পশুপাখির প্রতি তার মমতা ও নির্মমতাব সমন্বয়। কুকুর বিড়াল আর পাখির ছানা পুষিতে সে যেমন ভালোবাসে, এক এক সময় পোষা জীবগুলিকে সে তেমনি অকথ্য যন্ত্রণা দেয়। একবার সন্ধ্যার সময় ঝড় উঠিলে একটি বাচ্চা শালিখপাখি বাডিব বারান্দায় আসিয়া পড়িযাছিল। বিধান ছানাটিকে কুড়াইয়া আনিয়াছিল, আচল দিয়া পালক মুছিযা লন্ঠনেব তাপে সেঁক দিযা তাহাকে বাঁচাইয়াছিল শ্যামা। পরদিন খাচা আসিল, বিধান নাওয়া-খাওয়া ভুলিয়া গেল। ক্ষুদ্র বন্দী জীবটি যেন তাঁহারই সম্মানিত অতিথি। হরদম ছাতু ও জল সরবরাহ করা হইতেছে, বিধানের দিন কাটিতেছে খাচার সামনে। কী তাহার গভীর মনোযোগ, কী ভালোবাসে। অথচ কয়েকদিন পরে, এক দুপুরবেলা পাখিটিকে সে ঘাড় মটকাইয়া মারিয়া রাখিল।। শ্যামা আসিয়া দ্যাখে মরা পাখির ছানাটিকে আগলাইয়া বিধান যেন পুত্ৰশোকেই আকুল হইয়া কঁদিতেছে। ও খোকা, কী করে মরল বাবা, কে মারলে ? বিধান কথা বলে না, শুধু কঁাদে। সত্যভামা আজও এ বাড়িতে কাজ করে, সে উঠানে বাসন মাজিতেছিল, বলিল, নিজে গলা টিপে মেরে ফেললে মা, এমন দুরন্ত ছেলে জন্মে দেখিনি-সুন্দাের ছানাটি গো! তুই মেরেছিস! কোন মেরেছিস খোকা ? শ্যামা বারবার জিজ্ঞাসা করিল, বিধান কথা বলিল না, আরও বেশি করিয়া কঁদিতে লাগিল। শেষে শ্যামা রাগিয়া বলিল, কঁাদিসনে মুখপোড়া ছেলে, নিজে মেরে আবার কায়া কীসের ? মরা পাখিটাকে সে প্রাচীর ডিঙাইয়া বাহিরে ফেলিয়া দিল।