পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Vo মানিক রচনাসমগ্ৰ শামিয়ানার তলা ভরিয়া গিয়া খোলা আকাশের নীচে পর্যন্ত লোক জমিয়াছে। দুজন স্থূলকায়া গৃহিণীর মাঝে পড়িয়া মতির গরম বোধ হইতেছিল। এদিকে একসময় বাজনা বাজিয়া ওঠে। কনসার্ট,--- ঐকতান। শুনিলে এমন উত্তেজনা বোধ হয়! কিছু একটা উপভোগ্য ঘটিবার প্রত্যাশা। তারপর বাজনা থামিয়া যাত্রা শুরু হয়। ষোলোজন সখী আসিয়া নৃত্যু আরম্ভ করে। তাদের পরনে পশ্চিম ঘাগর। মতি ফিসফিস করিয়া বলে, ব্যাটাছেলে সখী সেজেছে, না বউ ? সখীরা নাচিয়া গেলে প্রবেশ করেন জনা ও অগ্নিদেবী। জনাকে দেখিয়া মতির সন্দেহ হয়। ও নিশ্চয় মেয়েমানুষ বউ! না ? তোর মাথা। চুপ কর, শুনতে দে। প্রবীরের প্রবেশ দ্বিতীয় দৃশ্যে। পূত্ৰঘাতী অৰ্জ্জুনকে যথাবিধি শাস্তি দিবার প্রতিজ্ঞামূলক গঙ্গাদেবীর এক-পৃষ্ঠাব্যাপী স্বাগত-উক্তির পরেই। প্রবীরকে দেখিয়াই আসর মুগ্ধ হইয়া যায়। কী স্মার্ট সাজপোশাক, কী লালিত্যময় যৌবনীমূর্তি, তলোয়ারটা কী চকচকে। কথা যখন সে বলে আসরে, একটা শিহবন বহিয়া গিয়া শ্রোতারা যেন পরম আরাম বোধ করে। জমিবে, প্রবীরেব পার্ট জমিবে। খাসা জমিবে। যেমন রাজপুত্রের মতো চেহারা, তেমনি চমৎকার গলা। প্রবীরের প্রিয়া মদনমঞ্জরীও আসরে আছেন। এত লোকের মাঝে এ যেন একান্ত নির্জন রাজোদ্যান এমনি নিঃসংকোচ নির্ভুল আবেগমথিত স্বাবে প্রবীর তাহাকে ভালোবাসিতে থাকে। যাত্রার আসরে হাত ধরার অতিরিক্ত প্রেমস্পর্শ নিষিদ্ধ। সে জন্য প্রবীরের কোনো অসুবিধা আছে মনে হয় না। শুধু কথায়, শুধু অভিনয়ে, এতগুলি লোকের মনে সে বিশ্বাস জন্মাইয়া দেয় যে তাহারা দুজন একদেহ একপ্ৰাণ। অবাক হয় কুসুম আর মতি। কুসুম বলে, ওলো, এ যে সেই লোকটা! মতি বলে, কী সুন্দর করছে বউ ? মনে হচ্ছে যেন সত্যি! কুসুম একটু হাসে, যেন তোর সঙেগই করছে, না ? মতি জবাব দেয় না। শোনে। প্রবীর বলে ; রাগ করিয়াছ ? কেন রাগ করিয়াছ অবোধ বালিকা ? কেন এত অভিমান ? দুটি চোখে কেন এ ভৎসনা ? মুখে মেঘ নামিয়াছে, দুলে দুলে ফুলে ফুলে উঠিতেছে বুক, দেখে মনে হয় আমি যেন বকিয়াছি তোরে, মন্দ বলিয়াছি। এ গাম্ভীৰ্য, হাসিাহীন এত কঠোরতা ফুলে কি মানায়, সখি, মানায় কুসুমে ? আমি তোরে ভালোবাসি, সত্য কহিয়াছি, প্ৰাণ দিয়ে ভালোবাসি তোরে। সাক্ষী নারায়ণ। সাক্ষী মোর হ্রদায়ের