পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in voo মানিক রচনাসমগ্ৰ ংখ্যাও কি কম! সংসাবে যেখানে যত টাকা, সেখানে তত নারী, সেখানে তত বৃপ। মতি সংসাবে এ নিয়ম জানিত না। সংসাবের কোন নিয়মটাই বা সে জানে? কঁচা মেয়ে সে, বোকা মেয়ে। প্রায় কুড়ি বগফিন্ট পরিমাণ পরিষ্কার চাদরের উপর গাদা করা ঘষামাজা সাজানো-গোছানো স্বজাতির মধ্যে আসিয়া পড়ায় সে যেন দিশেহারা হইয়া গিয়াছিল। বিমলবাবুর স্ত্রী শূন্ধোন, আমার মুখে কী দেখছ বাছা ? বিমলবাবুর মেয়ে বলে, তোমার চশমা দেখছে মা। মতির বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ করে। তাহাকে বসিতে দেওয়া হইয়াছে সম্মানের আসনেই, সামনের দিকে,-পিছনে আশ্রিত পরিজনদের মধ্যে নয়। শীতলবাবু নিজে মেয়েটিকে সঙ্গে করিয়া পৌছাইয়া দিয়া বলিয়াছেন, সামনে বসিযো। শশী ডাক্তারের বাড়ির মেয়ে। কাল শশী ডাক্তারের বাড়ির মেয়েরা যত বিশ্ৰী করিয়াই হােক খুব সাজিয়া আসিয়াছিল, এর আজ এ কী বেশ! শীতলবাবু আব্ব বিমলবাবুর বাড়ির মেয়েরা এইকথা ভাবিয়াছিল। তাহারা কাপড় চেনে, গয়না চেনে, নিজেদের ঘষে এবং মাজে। ও মেয়েটা, ধবিতে গেলে, রীতিমতো নোংরাই । শীতলবাবুব পুত্রবধু গতবার ছেলে হওয়ার সময় বাজিতপুরের সিভিল সার্জন আসিয়া পড়ার আগে শশীর হাতেই জীবন সমৰ্পণ করিতে বাধ্য হইয়াছিল। বিছানায় শুইয়া শুইয়া নভেল পড়ার সে কী ভীষণ শাস্তি! যাই হােক, ছেলেটি ঝির কাছে দোতলায় এখন চোখ বুজিয়া ঘুমাইতেছে। সিভিল সার্জন কবিয়াছিল কচু, ছেলেটা একরকম শশী ডাক্তারে বই দান বইকী? শীতলবাবুর পুত্ৰবধু তাই এক সময় মতিকে কৌতুহলেব সঙ্গে জিজ্ঞাসা কবিল, শশী ডাক্তার তোমার কে হয় গো ? কেউ না। ওমা! কেউ না ? এই বাত্রে তুমি পরের সঙ্গে যাত্রা দেখতে এলে ? পর কেন? দাদাব সঙ্গে এসেছি। তোমার দাদা কে? কাদের বাড়ির মেয়ে তুমি ? আমি ঘোষবাড়ির মেয়ে,--আমার কাবা স্বৰ্গীয় হারাণচন্দ্র ঘোষ। কথাটা শীঘ্রই রাটিয়া গেল। হারু ঘোষের মেয়েকে তাহাদেব মধ্যে গুজিয়া দেওয়াব স্পর্ধায় শশীীর উপর শীতলবাবু আর বিমলবাবুর পরিবারের মেয়েরা বিশেষ অসন্তুষ্ট হইলেন। মতির কাছে যাহারা ছিলেন, তাহারা বাড়ির মধ্যে যাওয়ার ছলে উঠিয়া গেলেন এবং ফিরিয়া আসিয়া অন্যত্র বসিলেন। হাত-পা ছড়াইয়া আরাম করিবার সুযোগ পাইয়াও মতির কিন্তু আরাম হইল না। অবহেলা অপমান বুঝিতে না পারার মতো বোকা সে তো নয়। এদিকে শশী মাঝে মাঝে সাজঘরে যায়। কুমুদকে প্রশংসা করিয়া বলে, বেশ হচ্ছে কুমুদ। তুই কলকাতার থিয়েটারে গেলি না কেন ? কুমুদ খুশি হইয়া বলে, ভালো হচ্ছে ? চোদো বছর উপোস করতে হয়েছে ভাই। তবু এখনও বউদিকে রাবণের হাত থেকে উদ্ধার করতে পারিনি। অযোধ্যায় ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে দাদাকে রাজা করতে পারলে বাঁচি । কুমুদ হাসে ; খানিক পরে অশোকবন থেকে বউদিকে আনতে যাব-রাবণ বধ হতে বেশি দেরি নেই। সে সিনটা দেখিস! হ্যারে, তোদের গায়ে গয়নার দোকান আছে? শশী বলিল, গয়নার দোকান! গয়নার দোকান কোথায় পাব ? দুটো স্যাকরার দোকান আছে, ফরমাশ দিলে গয়না তৈরি করে দেয়। ছোটাে ছোটাে দুটাে একটা গয়না সময় সময় তৈরি করে রাখে। হয়তো, দোকান করার মতো কিছু নয়। গয়না কিনবি নাকি? কিনব? আমি ? কেন, গয়না কিনিব কেন ?