পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in VQ4 8 মানিক রচনাসমগ্র ক্ষতের কতক দাগ অনেকটা মিলাইয়া আসিবে, কতক থাকিবে। কিন্তু যামিনী কবিরাজের বউয়েব বৃপের খ্যাতি আর রহিল না। বুপাই গেল নষ্ট হইয়া, বুপের খ্যাতি! একটা চোেখও তাহার নষ্ট হইয়া গিয়াছে। এই ক্ষতিটাই যামিনী কবিবাজের বউকে কাবু করিয়াছে সবচেয়ে বেশি। শুধু ক্ষতচিহ্নে ভরিয়া বুপ নষ্ট হওযাটাও তাহার কাছে সহজ ব্যাপার নয়। বুপ তাহার তেত্রিশ বছরের আত্মীয়, তেত্রিশ বছরের অভ্যাস। একগোছা চুল কাটিতে মেয়েরা কাতর হয়, এ তো তাহার সর্বাঙগীণ সৌন্দর্য, আসল সম্পত্তি। তবু এটা তাহার সহ্য হইত। মনকে সে এই বলিয়া বুঝাইতে পারিত যে আর কি তাহার ছেলেখেলার বয়স আছে? ছেলেভুলানো বুপ দিয়া এখন সে করিবে কী? কিন্তু চোখ কানা হইয়া যাওয়া! এ তো বুপ নষ্ট হওয়া নয়, এ যে কুৎসিত হওয়া কদৰ্য হওয়া! তাহাকে দেখিলে এবার যে লোকের হাসি পাইবে ? তাহার অমন ডাগর চোখ ! চোখটা নষ্ট হয়ে গেল। শশী। আমি কানা হয়ে গেলাম। কী আর করবেন সেনদিদি ? বেঁচে যে উঠেছেন।--শশী সান্তনা দেয়। এর চেয়ে আমার মরাই ভালো ছিল শশী, যামিনী কবিরাজের বউ বলে। বলে, দেখলে ঘেন্না হয়, না ? না না, ঘেন্না হবে কেন ? ঘেন্না হয় না। যামিনী কবিরাজেব বউকে দেখিলে শশীর দুঃখ হয়, ঘেন্না হয়তে হয না। না ঘেন্না হয় না। শশী সে বকম নয়। কিন্তু সেনদিদিরি দাম যে কমিয়াছে তাতে সন্দেহ নাই। শশী অবশ্য বুঝিতে পারে না, সেনদিদির আকর্ষণ যতখানি কমিয়াছে সহানুভূতি দিয়া তাহাব ক্ষতিপূরণ হইয়াছে। সেনদিদির হাসি আব দেখিবার মতো নয়, তাহাব একটি চোখে এখন আর গভীর স্নেহ বুপ নেয় না, তাহার মুখের দিকে অবাক হইয়া চাহিয়া থাকিবার সাধ্য এখন আর কাহারও নাই। সেনদিদির মুখের কথা, তাহাব স্নেহ ও পক্ষপাতিত্ব আজ আর অমূল্য নয়। তাহার জন্য শশীর দুঃখ হয়। কিন্তু শশীকে সে আর তেমনভাবে টানিতে পারে না। প্রতিদিন সেনদিদিকে দেখিতে আসার সময় শশী আজকাল পায় না। আসিলেও, বেশিক্ষণ বসিবার তাহার উপায় নাই। যামিনী কবিরাজেব বউকে ভালো করিয়া শশীর পসার কয়েক দিনেই বাড়িয়া গিয়াছে। রোগীকে সে আর ফিরাইয়া দেয় না, দেখিতে যায়, পকেটে টাকা লইয়া বাড়ি ফেরে। একটা রাত্রি সে তো নন্দনপুরেই কাটাইয়া আসিল। যাতায়াতের খরচ। আর দশ টাকা ভিজিট। গ্রামে দশটা রোগী দেখিলে দশ টাকা, একরাত্রে দশ দশটা টাকা পাওয়া সহজ কথা নয। যামিনী কবিরাজেব বউ বলে, সেনদিদিকে ত্যাগ করলে না কি শশী ? না, সেনদিদি। বোগীর বড়ো ভিড়। আসবার সময় পাই না। আঃ, বেঁচে থাকো বাবা, তাই হোক। আরও রোগী হোক, লক্ষপতি হও । ভগবানের কাছে, দিনরাত এই প্রার্থনা করছি।--যামিনী কবিরাজের বউ যেন কঁাদিয়া ফেলিবে । রোগা শরীর, আবেগে কান্নাই চলিয়া আসে।—বিয়ে করে সংসারী হও, দেশ জুড়ে তোমার নাম হােক, তাই দেখে যেন মরতে পাবি। এক চোখের, কোটরে ঢুকানো তাহার একটিমাত্র ডাগর চোখের, নিরতিশয় মোহাচ্ছন্ন সজল। দৃষ্টিতে শশীকে সে দেখিতে থাকে। যামিনীর চেলরা ওদিকে হামানদিস্তায় ঠকাঠক শব্দে গুল্ম গুড়া করে। যামিনী খায় তামাক। কাশে আর ভাবে। স্ত্রীয় ঘরের চৌকাঠও সে ডিঙায় না। শশীর সঙ্গে কথা বলে না। ভাবনার তাহার অন্ত নাই। থাকার কথাও নয়। এই বয়সে,-বয়স তাহার যাটের