পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Ꮤobr O মানিক রচনাসমগ্র বাবুদের বাড়ির লোক ছাড়া কাহারও দেহ ডুবানো নিষেধ। দারোয়ান লাঠি ঘাড়ে পুকুর পাহারা দেয়, লাঠিতে ভর দিয়া সে একগাল হাসে। ঘাট ছাড়া গ্রামের লোকের অন্য কোথাও কলসি ডুবানো বারণ। শীতলবাবুর বাড়ির ছেলেমেয়েরা স্নান করিয়া গেলে দু-তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ঘাটের কাছে জল কাদা হইয়া থাকে । জল লইতে আসিয়া কেহ বলে ; খোকাবাবুদের একটু সাবধানে স্নান করতে বলতে পার না দরোয়ানজি ? দরোয়ান বলে ; দিঘি কিস্কো? তুমারা ? তা বটে, দিঘিটা বাবুদের বটে। কিন্তু বৈশাখ মাস আসিতে এখনও দেরি আছে, বৈশাখ মাসে এ বছর খুব ঝড়বৃষ্টি হইবে কি না এখন হইতে তাই বা কে বলতে পারে ? শীতকালটা গ্রামেব লোক সুখে কাটায়। কই, মাগুর, শোলমাছ প্রচুর পাওয়া যায়। যাদের ডোবা আছে, ডোবা শুকাইয়া আসিলে জল হেঁচিয়া বুড়িখানেক মাছ পায়। তার মধ্যে খলসে আর ল্যাঠা মাছই বেশি। এই খাল আর খালের চিকরি-কাটা দেশে ভালো রাস্তা নাই, কিন্তু শীতকালটা দেশে কাঁটাইকেন সংকল্প করিয়া বিমলবাবু সপরিবারে একটা মোটরগাড়ি সঙ্গে করিয়া গ্রামে আসিলেন। বাজিতপুরে মোটরগাড়ি আছে। কিন্তু গাওদিয়ার মোটরগাড়ি । কুসুম শশীকে বলে, সেবার কলকাতায় মোটরগাড়ি চড়েছি। বিয়ের আগে যে বার কলকাতায় গিয়েছিলাম। বাবার সঙ্গে। শশী বলে, তোমাব সে কথা মনে আছে? কুসুম অবাক হইয়া বলে, বাঃ মনে থাকবে না ? কতদিন আব্ব হল ? আট বছল কী ন বছৰ। আমার বয়স কত ভাবেন ? পাঁচিশ ? ۹۹ দুর! বাইশ বছব।। সুদেবের সঙ্গে মতির বিবাহের প্রস্তাব ভাঙিয়া গিয়াছে। কুসুম ইদানীং আর ও কথা উত্থাপনও করিত না। মতির বিবাহ হোক বা না হোক তাহাব যেন কিছুই আসিয়া যায় না। পরান যদি বা রাত্রে কোনোদিন কথাটা তুলিত, কুসুম হাই তুলিয়া বলিত তাহার কোনো মতামত নাই। কোনো দিন কিছু না বলিয়াই সে ঘুমাইয়া পড়িত। এদিকে নিতাই তাগাদা দিতেছিল। এত বেশি তাগাদ দিতেছিল যেন বিবাহটা সুদেবের নয়, তাহার নিজের। শশীর সঙ্গে আর একবার পরামর্শ করিয়া শেষে পর্যানকে বলিতে হইয়াছে, না সুদেবের সঙ্গে মতির সে বিবাহ দিবে না। নিতাই শান্তভাবে কথাটা গ্ৰহণ করিতে পারে নাই। লোভ দেখাইয়াছে, সদৃপদেশ দিয়াছে, মেজাজ গরম করিয়াছে। কিন্তু, না, পরান রাজি নয়। ছোটােবাবু বরণ করে দিয়েছে, অ্যা? হারুদা মরলে তাকে কে পুড়িয়েছিল রে পরান ? কঁধ দিয়েছিল কে? ছোটোবাবু? ছোটােবাবু যখন বারণ করেছে, বাস, তবে আর কী, ছোটােবাবুর কথা বেদবাক্যি, বটে ? আমার নিজের বুদ্ধি নেই? মতির বিয়ে আমি শহরে দেব-ভদ্রঘরে। এ কথাটা পরান না বলিলেও পারিত। যাই হােক, তারপর সুদেব নিতাইয়ের নামে বাজিতপুরে মামলা বুজু করিয়াছে। অভিযোগ গুরুতর, গচ্ছিত ধন অপহরণ, বেআইনি আটক আর মারপিট। গায়ের জ্বালায় সুদেব নালিশ করিয়াছে বটে কিন্তু কিছু প্রমাণ করিতে পরিবে কি না সন্দেহ। নিতাই বিচক্ষণ সংযমী মানুষ। হঠাৎ কিছু করিয়া বসিবার লোক সে নয়, প্রমাণ রাখিয়া অপকর্ম সে কখনও করে না।