পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা Sybr> একদিন বাজিতপুর ফেরত নিতাইয়ের সঙ্গে শশীর রাস্তান্য দেখা হইল। এই মামলার ব্যাপাবে নিতাইকে অপরাধী সন্দেহ করিয়াও শশীর রাগ হইয়াছে সুদেবের উপর। নিতাই সুদেবের মামা, নিজেব মামা। একেবাবে মামলা না কবিয়া আব্ব কিছু তো সে করিতে পারিত ? কোর্টে এখন মতির নামটা উঠিয়া পড়িবে। পরানকে সাক্ষ্য দিতে যাইতে হইবে! সে এক কেলেঙ্কারি ব্যাপার। কিন্তু নিতাইয়েক সঙ্গে মামলার কথা শশী আলোচনা করিল না। বলিল, তোমাব কাছে কিছু টাকা পাওনা আছে নিতাই। দেব ছোটোবাবু, মাঘ মাসটা গেলেই শোধ করে দেব। শশী চিন্তিত হইযা বলিল, মাঘ মাস ? আচ্ছা তাই দিও। কিন্তু লালির বাছুবটা তুমি পর্যানকে দিলে না যে? লালি দুধ বন্ধ করেছে শুনলাম ? লালিব বাছুর পবানকে দেব কেন ছোটােবাবু ? কেন, লালিকে বেচবার সময় কথা হযনি প্রথম বাছুরটা পরান পাবে? না ছোটােবাবু, এমন কথা হয়নি, পরান মিছে বলেছে। লালিকে আমি কিনেছি হাবুদার ঠেয়ে, পবন কি জানে ? শশী উদাস ভাবে বলিল, যাক কথা না হয়ে থাকলে আর কী কথা ? পবশ্ব সের ছয়েক দুধ পাঠিযে স্পিকাই । বাড়িতে কী সব করবে বলছিল। শশী চলিয়া যায়,--নিতাই ডাকিযা বলিল, ছোটােবাবু, শোনেন। বাজিতপুবে জামাইবাবুকে দেখলাম। কাল বিয়ানে এ গাঁয়ে আসবেন। কোন জামাইবাবু পা মেজো । এ খবর শশী জানিত না। তাহদের কোনো সংবাদ না দিয়া নন্দলাল গাঁযে আসিতেছে। ইহাতে, আশ্চৰ্যও সে হইল না। বিবাহের পরেই নন্দলাল শ্বশুরবাডির সঙ্গে সম্পর্ক তুলিযা দিয়াছে। কখনও চিঠি লেখে না, চিঠিৰ জবাব দেয় না। বিন্দু প্রথম প্রথম চিঠি লিখিত, স্বামীব আদেশের বিরুদ্ধে, লুকাইয়া। নন্দলাল টের পাইবার পব লাপের বাডিবা সঙ্গে চিঠি লেখাব সম্পৰ্কটুকুও তাঁহাকে তুলিয়া দিতে হইয়াছে। একবাব সে যে দু-চারদিনের জন্য বাপেক বাড়ি আসিয়াছিল তাও স্বামীকে লুকাইয়া, ব্যাবসা উপলক্ষে নন্দলাল দিন পনেবো বোম্বে গিয়াছিল, সেই সময়। এমন ব্যাপাব বেশিদিন গোপন থাকিবার নয়। বোম্বে হইতে ফিবিয একদিন নন্দলাল স্ত্রীকে বলিয়াছিল । গাওদিযা গিযেছিলে ? বিন্দু ভয়ে কঁপিয়া একটু হাসিয়া ব্যাপারটা উড়াইয়া দিবােল চেষ্টা কবিয়া বলিয়াছিল, একদিনেব তরে গিয়েছিলাম, মোটে একদিন। বাবার যা অসুখের কথা শুনলাম!--রাগ করেছ? বাগ করেছ?--- ভ্যাঙ ইয়া, ---ছোটোলোকের বাচ্চা! গছাইয়া দেওযা বউ, প্রাণভযে গ্রহণ করা বউ, লেখাপড়া, নাচ-গান কিছু না জানা বউ জীবনের অপুৰ্ব্বণীয় ক্ষতি। বিন্দুকে নন্দলাল ত্যাগ করে নাই কেন, কে বলিবে! হায়তা কর্তব্যজ্ঞান, হয়তো খেয়াল, হযতো নির্বিবাদে। ওকে লইযা যা খুশি তাই করা যায় বলিয়া নন্দলালের কাছে বিন্দুর এক ধরনের দাম আছে,-কে বলিবে! বিন্দুকে নন্দলাল অত গ:- লা কাপড় দেয় কেন, সে আর এক রহস্য। বিন্দু কি ধার করা গহনা গায়ে দিয়া বাপের বাড়ি আসিয়াছিল? যাহা পায় নাই তাহাঁই পাইয়াছে এই অভিনয়টুকু করিয়া যাওয়ার জন্য ? কে বলিবে! জীবনের অজ্ঞাত রহস্য গাওদিয়ার বিন্দুকে গ্রাস করিয়াছে, কলিকাতার অনামি রহস্য। কলিকাতায় থাকিয়া পড়িবার সময়ও শশী যাহা ভেদ করিতে পারে নাই। নন্দলাল একপ্রকার অপমােনই করিত, কিন্তু শশী যাইতে ছাড়িত না। ভাইফোটার দিন কবার বিন্দু তাহাকে ফোটা দিয়াছে। বিন্দুর গা-ভরা গহনা সে দেখিতে পাইত না? না। অন্তঃপুরের দৈনন্দিন সাদাসিধে জীবন গহনার বোঝা বহিয়া বেড়াইতে বিন্দু ভালোবাসে না-চোখের আবিষ্কার কানে শোনা