পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in wobrbr মানিক রচনাসমগ্ৰ এই একটিমাত্ৰ জবাবে ক্ষণেকের জন্য শশীর মন যেন একেবারে হালকা হইয়া যায়। জানালা দিয়ে সে বাহিরের দিকে তাকায়। জানালার নীচে সেদিন কুসুম যে গোলাপের চারটি মাড়াইয়া দিয়াছিল, শশীর যত্নে সেটি আবার মাথা তুলিয়াছে। মতি স্পষ্টই জিজ্ঞাসা করে, আপনার সেই বন্ধুটি পত্ৰ দিয়াছে? কে রে মতি, কুমুদ ? না দেয়নি-কেন ? এমনি শুধোচ্ছি। এমনি শুধোবি কেন ও কথা? সুন্দর যাত্রা কবে যে! তা বটে ! সুন্দর যাত্রা করে বলিয়া কুমুদ পত্ৰ দিয়াছে কি না মতির তা জিজ্ঞাসা করা চলে বটে। শশী হাসিয়া বলে, ওর পার্ট তোর খুব ভালো লাগত, নারে মতি? আমার একার কেন, সবার লাগত। একটা যাত্রাগান দিন না ছোটােবাবু, দেবেন ? কত টাকা নেয় ? গভীর মুখে শশীর হাসিকে মতি অগ্রাহ্য করে, বলে, আমার টাকা থাকলে ও দলটি ভাড়া করে আনতাম ছোটোবাবু, আমাদের বাড়ির সামনে শামিয়ানা খেচে আসর করে দিতাম, পালা হত সাতদিন । মতি একটু গভীর হইয়াছে আজকাল। কথা বলিতে বলিতে দুচোখে তাহার একটু ভীরু ঔৎসুক্য দেখা দেয়। কথা শেষ করিয়া কী যেন ভাবে মতি। শশী ভাবে, কে জানে হয়তো ধীরে ধীরে অবশ্যম্ভাবী আত্মচিন্তাই এবাব আসিতেছে মতির। গ্রামের মেয়ে তো, নিশ্চিন্ত থাকিবার বযসটা ইতিমধ্যে পাব তই যা যাইতে আরম্ভ করিবে তাতে আশ্চর্য নাই। একদিন বাসুদেব বঁড়িয্যে সপরিবারে গ্রামত্যাগের আয়োজন কবিলেন। কলিকাতায় মেজোছেলে চাকরি কবিত, সম্প্রতি সেজোছেলেও কোনো আফিসে চাকুবে হইয়াছে। জমিজমা নাই। গোপালোব শত্ৰতার জন্য কেহ টাকা ধার করিতে আসে না। আসিলেও গোপালের পরামর্শে সুদে আসলে গাপ করিতে চায়। ম্যালেরিয়ায ভূগিতে আব্ব কেন গ্রামে থাকা ? এমন অনেক গিয়াছে। গ্রাম জুডিসা এখানে ওখানে পোড়ো ভিটা খাঁ খ্যা করে। খবব পাইযা শশী দেখা করিতে গেল। জিনিসপত্র বাঁধাৰ্ছাদা হইতেছে দেখিয়া হঠাৎ কেমন রাগ হইয়া গেল। শশীর। সে নিজে যখন গ্রামেব পাকে আত্মসমপণ কবিয়াছে চিরকালের জন্য, আব্ব কাবও যেন গ্রাম ত্যাগ করা অন্যায়। আপনার কাছে কতগুলো টাকা পেতাম বঁড়িয্যেকাকা। কলকাতা গিয়ে পাঠিয়ে দেব বাবা। কটা টাকা তো,--ছেলেরা মাসকাবাবে মাইনে পেলে একটা দিনও দেরি কবিব না। শশী মাথা নাড়িল, না, অনেকদিন পড়ে আছে টাকাটা, দিয়েই যান! শশীর এত টাকার প্রয়োজন কীসের কে জানে! বিশ্ৰী একটা কলহ বাধিয়া গেল বাসুদেবের সঙ্গে। তার দুই ছেলে বুখিয়া আসিল। কোনো পক্ষেরই মান-অপমানের পার্থক্য রহিল না। তবু শশী ছাড়িল না,-ছোটাে নোটবুকটিতে ভিজিট আর ওষুধের জন্য যত টাকার অঙ্কপাত করা ছিল, সমস্ত টাকা আদায় করিয়া ক্ষান্ত হইল। টাকাটা পকেটে পুরিয়া বলিল, দু-দুটাে চাকরে ছেলে আপনারডাক্তারের ফি দিতে মরেন কেন বঁড়িয্যেকাক ? কলকাতায় ডাক্তার ডেকে তার সঙ্গে যেন এ রকম করবেন না ককখনো, জুতো মেরে যাবে। ফিরিতে ইচ্ছা হয় না। শশীর,-অনেকক্ষণ ধরিয়া আরও তীব্র ভাষায় সকলকে গালাগালি দিতে ইচ্ছা হয়,-সে একটা কটু আনন্দের নিবিড় স্বাদ পায়। বাসুদেবের বিধবা বউট, মৃত ভুতোকে বাঁচানোর জন্য একদিন যে শশীর পথ আটকাইয়াছিল, হঠাৎ তার দিকে চোখ পড়ায় শশী যেন চমকাইয়া