পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী Vod সে রাত্রে ব্যবস্থা উলটাইয়া যায়। শীতলের বিছানায় শোয় বিধান, বিধানের ছোট্ট চৌকিতে শীতল পা মেলিতে পাবে না। একটা অদ্ভুত ঈর্ষার জ্বালা বোধ করিতে করিতে সে মা ও ছেলেব আলাপ শোনে। স্বপন দেখেছিলি, না রে খোকা ? ई। কীসের স্বপন বে ? ভুলে গেছি মা । খুকির গায্যে তুমি যেন পা তুলে দিও না বাবা। কী কবে দেব ? পাশবালিশ আছে যে ? তুই যে পাশবালিশ ডিঙিয়ে আসিস। বালিশের তলে কী হাতডাচ্ছিস ? টাৰ্চটা একটু দাও না মা। R কী করবি টর্চ দিযে বাত দুপুরে? এমনি জ্বেলে জ্বেলে খরচ করে ফ্যালো, শেষে দরকারের সময় মরিব এখন অন্ধকাবোঁ । একটু পরেই ঘরে টর্চেব আলো বাবকযেক জুলিযা নিভিয়া যায়, দেয়ালেব গায়ে টিকটিকির ডাক শুনিয়া বিধান তাকে খুজিযা বাহিব করে। নে হঠযোগে? দে এবাব । জল বগ্লাব মা ! জল খাইয। বিধান মত বদলায় । আমি এখানে শোেব না। মা, যা গন্ধ ! শ্যামা হাসে, তোব বিছানায় বুঝি গন্ধ নেই খোকা ? ভারী সাধু হয়েছিস, না ? বড়োদিনে✉ সময রাখালের সঙ্গে মন্দা কলিকাতায় বেড়াইতে আসিল, পরপর তাহার দুটি মেয়ে হইযাছে, মেয়ে দুটিকে সে সঙ্গে আনিল, ছেলেরা রহিল বনগাঁয়ে। মন্দার বড়ো মেয়েটি একটি খোঁড়া পা লইযা জন্মিয়াছিল, এখন প্রায় চাব বছর বয়স হইয়াছে, কথা বলিতে শেখে নাই, মুখ দিয়া সর্বদা লালা পড়ে। মেয়েটাকে দেখিযা শ্যামা বড়ো মমতা বোধ কবিল। কত কষ্টই পাইবে জীবনে! এখন অবশ্য মমতা কবিয়া সকলেই আহা বলিবে, বড়ো হইয়া ও যখন সকলেরা - লিগ্ৰহ হইয়া উঠিবে, ফেলাও চলিবে না, রাখিতেও গা জ্বালা কবিবে, লাঞ্ছনা শুবু হইবে তখন। মন্দা মেয়ের নাম রাখিয়াছে শোভা। শুনিলে মনটা কেমন কবিয ওঠে। এমন মেয়ের ও বকম নাম রাখা কেন? মন্দা বলিল, ওকে ডাকি বাদু বলে। শ্যামা ভাবিযাছিল, সতিন আসিবাব পর মন্দাবী জীবনের সুখ শান্তি নষ্ট হইয়া গিয়াছে কিন্তু মন্দাকে এতটুকু অসুখী মনে হইল না। সে খুব মোটা হইয়াছে, স্থানে-অস্থানে মাংস থলথল করে, চলাফেরা কথাবার্তায় কেমন থিয়েটারি ধরনের গিন্নিগিন্নি ভাব। স্বভাবে আর তাহাব তেমন ঝাঝি নাই, সে বেশ অমাযিক ও মিশুক হইয়া উঠিয়াছে। আবা বছর মন্দার শাশুড়ি মরিয়াদ্নে, গৃহিণীর পদটা বােধ হয় পাইয়াছে সেই, শাশুড়ির অভাবে ননন্দদেব সে হয়তো আর গ্রাহা করে না। বাখালের উপর তাহার অসীম প্রতিপত্তি দেখা গেল। কথা তো বলে না যেন হুকুম দেয়, র যা সে বলে তাই রাখাল শোনে। সতিন ? হ্যা, সে এখানেই থাকে বউ, বডড গরিবের মেয়ে, বাপের নেই চালচুলো, এখানে না। থেকে আর কোথায় যাবে বল, যাবার জায়গা থাকলে তো যাবে,--বাপ-ব্যাটা ডেকেও জিজ্ঞেস করে। না। চামারের হদ সে মানুষটা, ওই কবে তো মেয়ে গছালে, ছল করে বাড়ি ডেকে নিয়ে যেত, আজ নেমস্তন্ন, কাল মেয়ের অসুখ,-মন্দা হাসিল, পাড়ার মেয়ে ভাই, ষ্টুড়িকে এইটুকু দেখেছি, হ্যাংলার মতো ঠিক খাবার সময়টিতে লোকের বাড়ি গিয়ে হাজির হত,-কে জানত বাবা ও শেষে বড়ো হয়ে আমারই ঘাড় ভাঙবে!