পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8\Sybr মানিক রচনাসমগ্র তারপর একটি দুটি করিয়া কুমুদের বন্ধুরা আসিতে আরম্ভ করে। প্রতিদিন ইহাদের সংখ্যা বাড়িতে থাকে। আশ্চর্য সব বন্ধু কুমুদের! এ রকম লোক মতি জন্মে কখনও দ্যাখে নাই। আসিয়া দরজায় ঘা দেয়। কুমুদ বলে, কে ? আমি । কুমুদ বলে, দরজা খুলে দাও মতি। দরজা খুলিয়া মতি ঘরের কোণে সরিয়া যায়। সরাসরি ঘরে ঢুকিযা কুমুদের বন্ধু বিছানায় বসে। প্রথমবার আসিয়া থাকিলে মতির দিকে চোখ পড়ায় খানিকক্ষণ তাকাইয়াই থাকে। কোথায় পেলি ? কুমুদ শুইয়া থাকিয়াই জবাব দেয়, বউ। বন্ধু হাসে। ফস করিয়া দিয়াশলাই জ্বালিয়া সিগারেট ধরায়। আরেক দফা মতিকে দেখিয়া বলে, চা করে দিকি বউদি? চিনি কম, কড়া লিকার। এবং পরীক্ষণেই কুমুদের সঙ্গে গল্পে মশগুল হইয়া যায়। মতি গায়েব মেয়ে, বন্ধ যে লোক ভালো নয়। সে তা বুঝিতে পারে। তবু আর যে সে একবারও তার দিকে ভালো করিয়া চাহিয়া দ্যাখে না মতি তাতে আশ্চর্য হইয়া যায়। ভাবে, কুমুদের বন্ধু লোক যেমন হােক, ভদ্রতা জানে। এমন ভাব দেখাইতে পারে যেন এ ঘবে শুধু বন্ধু আছে, বন্ধুর বউ নাই! সকলে এ রকম নয়। মতির সঙ্গে আলাপ করিবার চেষ্টাও কেউ কেউ কবে। কেউ ঘরে ঢুকিয়াই কারও কতবার্তা হয় কৃত্রিম, কারও সহজ ও সরল। বই-টই দু-একটা উপহারও মতি পায়। এই সব বন্ধুদের মধ্যে একজনকে মতির বড়ো ভালো লাগিল, মোটা জোবালো চেহারা আর শক্ত কালো একঝাড় গোফ থাকা সত্ত্বেও। তার নাম বনবিহারী। জাকিয়া বসিয়া প্রথমেই সে ঠাট্টা করিয়া বলিল, খুঁকি বলব না বউদ্দি বলব ? মতি বলিল, খুকি। কেন বলবেন ? বনবিহারী যেন অবাক হইয়া গেল। কুমুদকে বলিল, কই রে, তেমন গেয়ো তো নয় ? কথা বলার জন্যে সাধাসাধি করতে হল কই ? কুমুদ বলিল, লজ্জা একটু ভেঙেছে। আরও কত কী ভাঙবে!—বলিয়া বনবিহারী হাসিল। মতিকে বলিল, অনেক দিনের বন্ধু আমি কুমুদের। বয়সের হিসােব ধরলে আমি তোমার ভাসুর হব, কিন্তু বয়সের কথাটা মনে রাখতে বউ আমাকে বারণ করেছে। মতির লজাও করে, হাসিও আসে। বনবিহারী বলিল, কুমুদ তোমাকে হােটেলে এনে তুলেছে শুনে মাথাটা ফাটিয়ে দিতে এসেছিলাম। আমার স্ত্রীও এই ইচ্ছা অনুমোদন করেছেন। এখন তোমার অনুমতি পেলেই কাজটা করে ফেলতে পারি। দেব নাকি মাথাটা ফাটিয়ে ? কৌতুকে মতির চােখ উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। বনবিহারী বলিল, বিজ্ঞাপনের ছবি এঁকে পেট চালাই, বাড়ি বলতে একটা ঘর আর একফোটা একটু বারান্দা। তবু সেটা বাড়ি, হােটেল তো নয়! এ রাসকেলের তাও খেয়াল থাকে না। অসময়ে আসিয়া বনবিহারী অনেকক্ষণ বসিয়া গেল। আগাগোড়া কত হাসির কথাই যে সে বলিল। শেষের দিকে চাপিয়া রাখিতে না পারিয়া মতি মাঝে মাঝে শব্দ করিয়াই হাসিয়া উঠিতে লাগিল। কুমুদকে একদিন সন্ত্রীক তার বাড়িতে যাওয়ার হুকুম দিয়া বনবিহারী সেদিন বিদায় হইল।