পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8Ꮤ2S মানিক রচনাসমগ্র কুমুদ বারণ করিয়া বলিল, না না, দরকার নেই। আমিই ব্যবস্থা করব শশী। গাড়ি প্ল্যাটফর্ম পার হইয়া গেলে মতি বাহির হইয়া আসিল। বলিল, এ কী হল? আমি যে নামতে পারলাম না ? কই, আর পারলে ? কী হবে। তবে ? কুমুদ হাসিয়া বলিল, কিছু হবে না মতি, বোসো। এ রকম ছলনা করলে কেন ? বললেই হত সঙ্গে যাবে ? মতি বসিয়া বলিল, ওরা ছিল যে, গোলমাল করত। গাড়ির সমস্ত লোক সকৌতুকে তাহাদের দিকে চাহিয়া ছিল, কারও তা খেয়াল ছিল না। গাড়ির গতি বাড়িতে বাড়িতে মতির মুখের বিবর্ণিতা ঘুচিয়া যাইতেছিল। বার কয়েক সে জোরে জোবে নিশ্বাস গ্ৰহণ করিল। কুমুদ বলিল, সঙ্গে তো চললে, কোথায় থাকবে কী করবে। সে সব ভেবে দেখেছ? কুমুদের মতো বেপবোয়াভাবে মতি বলিল, ওর আর ভাবব কী? গৃহবিমুখ যাযাবর স্বামীর সঙ্গে মতিও আজ এলোমেলো পথের জীবনকে ববণ করিল--- আমাদের গেয়ো মেয়ে মতি। হয়তো একদিন ওদের প্ৰেম নীড়ের আশ্রয় খুজিবে, হয়তো একদিন ওদের শিশুর প্রয়োজনে নীড় না। বঁধিয়া ওদের চলিবে না—জীবনযাপনের প্রচলিত নিয়ম-কানুন ওদের পক্ষেও অপরিহার্য হইয়া উঠিবে। আজ সে কথা কিছুই বলা যায না। পুতুলনাচের ইতিকথায্য সে কাহিনি প্রক্ষিপ্ত—ওদের কথা এইখানেই শেষ হইল। যদি বলিতে হয় ভিন্ন বই লিখিয়া বলিব । বারো হাসপাতালের নব-নির্মিত গৃহটি দেখিতে ভারী সুন্দর হইয়াছে। ইটের উপরে লাল রং করা ছােটােখাটাে ঝকঝকে সুশ্ৰী বাড়িখানা দেখিয়া আপশোশ হয় যে এটা না দেখিয়া যাদবের মবা উচিত হয নাই। সামনে কার্নিশের নীচে ইংরেজিতে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা হইয়াছে -যাদব মেমোরিযাল হসপিটাল ; তবু লোকে মুখে বলিতে বলে শশী ডাক্তারের হাসপাতাল। যাদবকে যে লোকে ভুলিয়া গিয়াছে তা নয়। যাদবের সঙ্গে হাসপাতালের সম্পর্কটা প্ৰত্যক্ষ-গোচর হইয়া থাকে নাই,--- অথচ এদিকে শশীকেই সকলে হাসপাতালটি গড়িয়া তুলিতে দেখিয়াছে এবং এখন সেই সমাগত রোগীদের সযত্নে বিতরণ করিতেছে ওষুধ । হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাব হাঙ্গামা শেষ হইয়াছে, শশীর যশ ও সম্মানের বৃদ্ধি স্থগিত হয় নাই। জনসাধারণের সমবেত মনটা চিরদিন একাভিমুখী, যখন যেদিক ফেরে সেই দিকেই সবেগে ও সতেজে চলিতে আরম্ভ করে। জনরিবের তিলটি যে দেখিতে দেখিতে তাল হইয়া উঠে তার কারণও তাই। লোকমুখে ছোটাে ঘটনা বড়ো হয়-মানুষও হয়। শশী অসাধারণ কাজ কিছুই করে নাই, যাদব যে কর্তব্যভার তার উপরে চাপাইয়া দিয়া গিয়াছিলেন সেটুকু কেবল ভালোভাবে সম্পন্ন করিয়াছে। ফলটা হইয়াছে অচিন্তিতপূর্ব! নেতার আসনে বসাইয়া সকলে তাহাকে অনেক উচুতে তুলিয়া দিয়াছে। কয়েকটি স্থানে বক্তৃতা করিয়া শশীর বলিবার ক্ষমতােটাও খুলিয়া গিয়াছে আশ্চর্য রকম। সভা-সমিতিতে এখন তাহাকে প্রায়ই বলিতে হয়, সকলে নিবিড় মনোযোগের সঙ্গে তার কথা শোনে। শশী আবেগের সঙ্গে কথা বলিলে সভায় আবেগের সঞ্চার হয়, হাসির কথা বলিলে আকস্মিক সমবেত হাসির শব্দে সভার আশেপাশের পশুপাখি চমকাইয়া ওঠে।