পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in GS মানিক রচনাসমগ্র লইয়া নিজের জন্য যে জীবন শ্যামা রচনা করিয়াছে, তার মধ্যে শীতল আশ্রয়ের মতো, জীবিকার উপায়ের মতো তুচ্ছ একটা পার্থিব প্রয়োজন মাত্র। আপনার প্রতিভায় সৃজিত সংসারে শ্যামা ডুবিয গিয়াছে। শীতল সেখানে ঢুকিবার রাস্তা না খুজিলেই সে বঁাচে। শ্যামা বলে, ওমনি মানুষ মামা-ওমনি গা-ছাড়া গা-ছাড়া ভাব। কী এল কী গেল, কোথায় কী হচ্ছে কিছু তাকিযে দ্যাখে না,--খেয়াল নিয়েই আছে নিজের। ভগ্নীপতি চাইলে, দিয়ে দিলে তাকে হাজারখানেক টাকা ধাবি করে—না একবার জিজ্ঞেস করা, না একটা পরামর্শ চাওযা ! তাও মেনে নিলাম মামা, ভাবলাম দিয়ে যখন ফেলেছে আর তো উপায় নেই।--যে মানুষ ওব ভগ্নীপতি ও টাকা ফিবে পাওয়ার আশা নাই!-কী আর হবে ? এই সব ভেবে জমানো যে কটা টাকা ছিল,---কী কষ্টে যে টাকা কটা জমিয়েছিলাম মামা ভাবলে গা এলিয়ে আসে-দিলাম একদিন সবগুলি টাকা হাতে তুলে, বললাম, যাও ধার শুধে এসো, ঋণী হয়ে থেকে কেন ভেবে ভেবে গায়ের রক্ত জল করা? টাকা নিযে সেই যে গেল, ফিরে এল সাদিন পবে। ধারের মতো ধার রইল, টাকাগুলো দিযে বাবু সাদিন ফুর্তি করে এলেন । সেই থেকে কেমন যেন দমে গেছি মামা, কোনোদিকে উৎসাহ পাইনে। ভাবি, এই মানুষকে নিযে তো সংসার, এত যে কবি আমি কী দাম তার, কেন মিথ্যে মরছি খেটে খেটে-সুখ কোথা আদেষ্টে % মামা সান্তনা দিযা বলে, পুরুষমানুষ আমন একটু আধটু করে শ্যামা—-নিজেই আবাব সব ঠিক কবে আনে। আনছে তো বাবু রোজগার করে, বসে তো নেই। শ্যামা বলে, আমি আছি বলে, আব্ব কেউ হলে এ সংসাব কবে ভেসে যেত মামা। মামা একদিন কোথা হইতে শ্যামাকে কুড়িটা টাকা আনি যা দেয়। শ্যামা বলে, এ কী মামা ? মামা বলে, বাখ না, রাখ—খরচ করিস। টাকাটা পেলাম, আমি আব্ব কী করব ও দিযে ? সত্যই তো, টাকা দিয়া মামা কী কবিবে? শ্যামা সুখী হইল। মামা যদি মাঝে মাঝে এ রকম দশবিশটা টাকা আনিয়া দেয়। তবে মন্দ হয় না। মামাকে শ্যামা ভক্তি কবে, কাছে বাখিযা শেষ বয়সে তাহার সেবাযত্ন কবার ইচ্ছাটাও শ্যামার আন্তরিক। তবে, তাহাব কিনা, টানাটানির সংসাব, ইন্টসুবকি কিনিয়া রাখিয়া টাকার অভাবে সে কিনা দোতলায় ঘর তোলা আরম্ভ করিতে পারে নাই, মেযে কি না তাহার বড়ো হইতেছে, টাকার কথাটা সে তাই আগে ভাবে। কী করিবে সে ৮ তাব তো জমিদাবি নাই। মামা থাক, হাজাব দিশহাজাব যদি নাই পাওযা যায়, মামাব জন্য যে বাডতি খৰচ হইবে অন্তত সেটা আসুক, শ্যামা আব্ব কিছু চায় না। দিন পনেরো পরে মামা একদিন বর্ধমানে গেল, সেখানে তাহার পবিচিত কোনো সাধুব আশ্রম আছে, তার সঙ্গে দেখা কবিবে। বলিয়া গেল দিন তিনেক পরে ফিবিযা আসিবে। শ্যামা ভাবিল, মামা বোধ হয়। আর ফিরিয়া আসিবে না, এমনিভাবে ফাঁকি দিয়া বিদায় লইয়াছে। শীতল ক্ষুন্ন হইল সবচেয়ে বেশি। বন্ধনহীন নির্বান্ধব ভ্ৰাম্যমাণ লোকটির প্রতি সে প্রবল একটা আকর্ষণ অনুভব করিতেছিল। মামা যখন যায়, শীতল বাড়ি ছিল না। মামা চলিয়া গিয়াছে শুনিয়া সে বাববার বলিতে লাগিল, কেন যেতে দিলে ? তোমার ঘটে একফোটা বুদ্ধি নেই, মামার স্বভাব জানো ভালো করে, আটকাতে পারলে না? বোকা হাঁদাবাম তুমি-মুখু্যর একশেষ। কচি খোকা নাকি ধরে বাখব? ধরে আবার রাখতে হয় নাকি মানুষকে ? কী বলেছ কী করেছ তুমিই জান, যা ছোটাে মন তোমার, আত্মীয়স্বজন দুদিন এসে থাকলে খরচের ভয়ে মাথার তোমার টনক নড়ে যায়,--ছেলেমেয়ে ছাড়া জগতে যেন পোষ্য থাকে না মানুষের। —ছেলে তোমার কী করে দেখো, তোমার কাছেই তো সব শিখছে, তোমার কপালে ঢের দুঃখ আছে। V.