পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী GV) পাগল হলে নাকি তুমি ? কী বকছু ? শীতল যেন কেমন করিয়া শ্যামার দিকে তাকায়। খুব রাগিলে আগে যেমন করিয়া তাকাইত সে বকম নয়। --পাগল আমি হইনি। শ্যামা, হয়েছ তুমি। ছেলে-ছেলে করে তুমি এমন হয়ে গেছ, তোমার সঙ্গে মানুযে বাস কবিতে পারে না,-ছেলে না কচু, সব তোমার টাকার খাঁকতি, কী করে বড়োলোক হবে দিনবাত শুধু তাই ভাবিছ, কারও দিকে তাকাবার তোমার সময় নেই। জন্তুর মতো হয়েছ তুমি, তোমাব সঙ্গে একদণ্ড কথা কইলে মানুষের ঘেন্না জন্মে যায় এমনি বিশ্ৰী স্বভাব হয়েছে তোমাব, লোকে মরুক বঁচুক তোমার কী? সময়ে মানুষ টাকা পয়সাব কথা ভাবে আবার সময়ে দশজনের দিকে তাকায়, তোমার তা নেই,-আমি বুঝিনে কিছু! টাকার কথা ছাড়া এক মিনিট আমার সঙ্গে অন্য কথা কইতে তোমার গাযে জ্বব আসে, মন খুলে স্বামীর সঙ্গে মেশার স্বভাব পর্যন্ত তোমার ঘুচে গেছে, বসে বসে খালি মতলব আঁটিছ কী করে টাকা জমাবে, বাড়ি তুলবে, ঘব তুলবে, টাকার করতে জানে। বক্তমাংসেব মানুষ তুমি নও, লোভ করার যন্তর।! বাস বে। --শীতল এমন কবিয়া বলিতে পারে ? সমালোচনা করার পাগলামি এবার তাহার আসিযছে নাকি ৮ এ সব সে বলিতেছে কী ? শ্যামাব সঙ্গে মানুষ বাস করিতে পারে না ? মানুষের সঙ্গে অনুভুতিব আদানপ্রদান সে ভুলিয়া গিয়াছে –একেবারে ভুলিয়া গিয়াছে? সে জন্তু, যন্ত্র, বেশ্যাব চেয়ে অধম ? কেন, টাকা পয়সা বাডিঘর সে নিজের জন্য চায় নাকি! শীতল দেখিতে পায় না নিজে কত কষ্ট কবিয়া থাকে, ভালো কাপড়টি পরে না, ভালো জিনিসটি খায় না? শ্যামা শীতলকে এই সব বলে, বুঝাইয়া বলে। শীতল বলে, ভালো খাবে পরবে কী, মানুষ ভালো খায় ভালো পরে—ভালো মানুষ। তুমি তো 6-ठँ ठु | ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হয। --শ্যামা বলে। শীতল বলে, তাই তো বলছি, টাকা আর ভবিষাৎ হয়েছে তোমা বৰ সব, ভবিষ্যৎ করে করে জন্ম কেটে গেল, —অত ভবিষ্যৎ কাব্যও সয় না। ভবিষ্যতের ভাবনা মানু, সাব থাকে, অল্প-বিস্তর থাকে, তোমার ও ছাড়া কিছু নেই, ওই তোমার সর্বস্ব-বড়ো বেখাপ্পা মানুষ তুমি, মহাপাপী! শোনো একবাব শীতলের কথা! কীসে মহাপাপী শ্যামা ? কোনোদিন চােখ তুলিয়া পরপুরুষের দিকে চাহিয়াছে ? অসৎ চিন্তা করিয়াছে ? দেবদ্বিজে ভক্তি রাখে নাই ? শ্যামা আহত, উত্তেজিত ও বিস্মিত হইয়া থাকে। শীতল তাহাকে বকে? যার সংসার সে মাথায় করিয়া রাখিয়াছে? যার ছেলেমেয়ের সেবা করিয়া তাহার হাতে কড়া পডিয়া গেল, মেরুদণ্ড বঁকিয়া গেল, ভারবহণ বঁাকের মতো ? ধন্য সাসাবা! ধন্য মানুষের কৃতজ্ঞতা। মামা কিন্তু ফিরিয়া আসিল,-সাতদিন পরে। সাতদিন পরে মামা ফিরিয়া আসিল, আরও দিন দশেক পরে শ্যামা দোতলায় ঘর-তোলা আরম্ভ করিল, বলিল, জানো মামা উনি বলেন আমি নাকি কেপ্লনের একশেষ, নিজে তো ডাইনে-বায়ে টাকা ছড়ান,-আমি মরো-বেঁচে কটা টাকা রেখেছি বলে না ঘরখানা উঠছে? সংসারে ওনার মন নেই, উড় উড়ু কচ্ছেন। আমিও যদি তেমনি হই সব ভেসে যাবে না, ছারখার হয়ে যাবে না। সব ? টাকা রাখব। আমি, ইটসুরকি কিনব আমি, মিন্ত্র ডাকব আমি,--তারপর ঘর হলে শোবেন কে? উনি তো? আমি তাই জন্তুজানোয়ার,--যন্তর।!! কথা কইনে সাধে ? কইতে ঘেন্না হয়!