পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in জননী bra শঙ্কর বলে, না মাসিম, আপনাদের বাড়ি খালি পড়ে আছে, কেউ নেই বাড়িতে। জানালা কপাট বন্ধ, সামনে বাড়িভাড়ার নোটিশ ঝুলছে, --আমি কদিন দেখেছি। শ্যামা অবাক হইয়া বলে, তবে কি ভাড়াটে উঠে গেল? আপনি যাদের ভাড়া দিযেছিলেন তারা যাবার পর কেউ আসেনি মাসিমা। আমি যাই যে মাঝে মাঝে নকুডবাবুর বাড়ি, আমি জানিনে ?--শঙ্কর হাসে, ভাড়াটে এলে কি বাইরে তালা দিয়ে লুকিয়ে থাকত ? হারাণ। তবে ছুতা করিয়া তাতাকে অর্থ সাহায্য করিতেছেঃ হারাণের কাছে কোনোদিন টাকা সে চাহে নাই, কেবল ভাডাটে উঠিয়া যাওয়া উপলক্ষে হাবাণকে সেই যে সে চিঠি লিখিয়াছিল, সেই চিঠিতে দুঃখের ক্যদুনি গাহিয়াছিল অনেক। তাই পডিযা হারাণ তাহাকে পচিশ টাকা পঠাইয়া দিয়াছে, যতদিন বাড়িতে তাহাব ভাড়াটে না আসে মাসে মাসে নিজেই তাহাকে এই টাকাটা দেওয়া ঠিক করিয়াছে হারাণ? সংসারে আত্মীয়-পব সত্যই চেনা যায় না। শ্যামা কে হারাণের ? শ্যামার মতো দুঃখিনীর সংস্রবে। হারাণকে সর্বদা আসিতে হয়, শ্যামাব জন্য এত তার মমতা হইল কেন ? তিনদিন পরে শঙ্কাকব কলিকাতা চলিয়া গেল। এই তিনদিন সে ভালো করিয়া হঁটিতে পারে নাই, ঘরেব মধ্যে সে বন্দী হইযা থাকিয়াছে। মজা হইযাছে বকুলের। বাড়িব ছেলেরা বাহিরে চলিয়া গেলে এক, সে শ”কবকে দখল করিতে পারিযাছে শঙ্কর চলিয়া গেলে কদিন বকুল মনমরা তই যা বহিল। তিন-চাবদিন পরে হাবাণের মনিঅৰ্ডাব আসিলা।। সই কবিয়া টাকা নেওয়াব সময় শ্যামার মনে হইল গভীর ও গোপন একটি মমতা দূর হইতে তাহার মঙ্গল কামনা করিতেছে, স্বার্থ ও বিদ্বেষশুবা। এই জগতে যাব তুলনা নাই। দুঃখের দিনে কোথায বহিল। সেই বিষ্ণুপ্রিয়া, স্বামীর পাপের ছাপমাবা সন্তান গর্ভে লইয়া একদিন যে ভিখারিনিবা মতো জননী শ্যামাব সখ্য চাহি যাছিল ? যার এক মাসের পেট্রল খরচ পাইলে সস্তানসহ শ্যামা দুমাস বাঁচিয়া থাকিতে পাবিত ? টাকাব প্রাপ্তিসংবাদ দিযা হারাণকে সে একখানা পত্ৰ লিখিল । হারাণের ছল যে সে ধরিতে পারিয়াছে সে সব কিছু লিখিল না, লিখিল আর জন্মে সে বোধ হয় হ’ণের মেয়ে ছিল, হারাণ তার জন্য যা করিয়াছে এবং করিতেছে জীবনে কখনও কী শ্যামা তাহা ভুলিবে। এমনই আবেগপূর্ণ অনেক কথাই শ্যামা লিখিল । হাবাণ জবাবও দিল না। না দিক । শ্যামা তো তাহাকে চিনিযৗছে ; শ্যামাব দুঃখ নাই। শীতলের সঙ্গে শ্যামার যোগসূত্র শীতলের কয়েদ হওয়াব গোড়াতেই ছিন্ন হইয়া গিয়াছিল, জেলে গিয়া কখনও সে শীতলের সঙ্গে দেখা করে নাই। চিঠিপত্রও লেখে নাই। কোথায় কোন জেলে শীতল আছে তাও শ্যামা জানে না। আগে জানিবাব ইচ্ছাও হইত না। এখন শীতলের ছাড়া পাওয়ার সময় হইয়া আসিয়াছে। সে কোথায় আছে, কবে খালাস পাইবে মাঝে মাঝে শ্যামার জানিতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু জানিবার চেষ্টা সে কবে না। শীতলকে কাছে পাইবাব বিশেষ আগ্ৰহ শ্যামার নাই। সব সময় সে যে স্বামীর উপর রাগ ও বিদ্বেষ অনুভব করে তাহা নয়, বরং কোথায লোহাব শিকের অন্তরালে পাথর ভাঙিয়া সে মরিতেছে ভাবিয়া সময় সময় মমতাই সে বোধ করে, তবু মনে তাহার কেমন একটা ভযা জন্মিয়া গিয়াছে শীতল ফিরিয়া আসিলে আবার সে দারুণ কোনো বিপদে পড়িবে। তাছাড়া ব্যস্ত হইয়া লাভ কী? ছাড়া পাইলে স্ত্রীপুত্রকে শীতল খুজিয়া লইবে না কী? বেশ শান্তিতে আছে সে। নাইবা রহিল তাহার নিজের বাডিতে থাকিবার আনন্দ, আর্থিক সচ্ছলতার সুখ ? এখানে ছেলেমেয়েদের শরীর ভালো আছে, বিধানের অদ্ভুত পড়াশোনার ফল ফলিতেছে, স্কুলের