পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী ܠ ܬ শ্যামা ভয়ে ভয়ে বলে, কোনো ব্যবস্থাই তো নেই এখেনে, খালি বাড়িতে এসে উঠেছি আমরা, বনগাঁ কি নিয়ে যাওযা যাবে না ? হারাণ যেন আনমনেই বলে, বনগাঁ ? তা চল, বনগাতেই নিয়ে যাই,-- একটা দিন আমার নষ্ট হবে, হলে আর উপায় কী? জুব করে, না খেযে, ঠান্ডা লাগিয়ে কী কাণ্ডই বাধিয়ে রেখেছে। হতভাগা। কটায় গাড়ি? দেড়টায় ? তবে সময় আছে ঢের, যাও দিকি তুমি রাখাল ওষুধপত্রগুলি নিয়ে এসো কিনে আমি কটা বেগী দেখে আসছি, ঘুরে এগারোটার মধ্যে।--দুটাে পান আমায় দিতে পার ছেচে ? দোক্তা থাকে তো দিও খানিকটা। হারাণ বুড়া হইয়া গিয়াছে, পান চিপাইতে পাবে না, হেঁচা পান খায়। কিন্তু হারাণ বদলায় নাই। বুডা হইতে হইতে সে মরিয়া যাইবে, তবু বোধ হয় বদলাইবে না। শ্যামা কি জানে না। আত্মীয়তা কবিয়া শীতলকে সে বনগাঁ পোছাইয়া দিতে যাইতেছে না, যাইতেছে ডাক্তার হইয়া রোগীর সঙেগ ? শ্যামাব বলার অপেক্ষা রাখে নাই। তা সে কোনোদিনই রাখে না। সেই প্রথমবার বিধানেব অসুখের সময। জ্বরতপ্ত শিশুটিকে সে যে গামলার ঠান্ড জলে ডুবাইয়াছিল সেদিনও সে শ্যামার বলার অপেক্ষা রাখে নাই। যা করা উচিত হারাণ। তাই করে। হারাণের স্নেহ নাই, আত্মীয়তা নাই, কোমলতা নাই, কতবার ভুল করিয়া শ্যামা ভাবিয়াছে হারাণ। তাহাকে মেয়ের মতো ভালোবাসে - ভাই মাদি সে বাসিবে তবে বাডিভাড়ার নাম কবিয়া টাকা শ্যামাকে সে পাঠাইবে কেন ? সোজাসুজি পাঠাইতে কে তাকে বাবণ কবিয়াছিল ? পবের দান গ্রহণ করিতে অন্য সকলের কাছে শ্যামা লজ্জা পাইবে, এই জন্য ? হাবাণের মধ্যে ও সব দুর্বলতা নাই। কে কোথায় কী কারণে লজ পাইবে হারাণ কি কখনও তা ভাবে ? স্নেহ মনে করিয়া শ্যামা পাছে কাছে ঘেঁষিতে চায়, শ্যামা পাছে মনে কবে অযাচিত দানের পিছনে হারাণের মমতার উৎস লুকাইয়া আছে, আত্মীযতা দাবি করার সুযোগ পাছে শ্যামাকে দেওয়া হয়, তাই না হারাণ। তাহার দানকে শ্যামার প্রাপ্য বলিয়া ঘোষণা করি যাছিল! অভিমানে শ্যামার কান্না আসে। অভিমানে কান্না আসিবাব বয়স তাহার নয়, তবু মনের মধ্যে আজও যে অবুঝ কাচা মেয়েটা লুকাইয়া আছে যে বাপের ” হৈ জানে নাই, অসময়ে মাকে হারাইযাছে, ষোলো বছৰ বযস হইতে জগতে একমাত্র আপনার জন মামাকে খুজিয়া পায় নাই, স্বামীর ভয়ে দিশেহারা হইযা থাকিয়াছে, সে যদি আজ কঁদিতে চায় পৌঢ়া শ্যামা তাহাকে বারণ করিতে পরিবে কেন ? ৩াহাবা বনগা পৌছিলে মন্দা শীতলকে দেখিয়া একটু কঁদিল, তারপব তাড়াতাড়ি তার জন্য বিছানা পাতিযা দিল, এদিক-ওদিক ছুটাছুটি কবিয়া ভারী ব্যস্ত হইয়া পড়িল সে, সেবাযত্নের ব্যবস্থা করিল, ছেলেমেয়েদের সরাইয়া দিল, শ্যামাকে বলিতে লাগিল, ভেবো না তুমি বউ, ভেবো না,- ফিরে যখন পেয়েছি দাদাকে ভালো কবে আমি তুলিবই। বকুল বিস্মফারিত চোখে শীতলকে খানিকক্ষণ চাহিয়া দেখিল, তারপর সে যে কোথায় গেল কেহ। আর তাহাকে খুজিয়া পায় না। হারাণ ডাক্তারকেও স্বয়। কোথায় গেল দুজনে ? শেষে সুপ্ৰভাই তাদের আবিষ্কার করিল বাড়ির পিছনে টেকিঘরে। ও ঘরে বকুল খেলাঘর পাতিয়াছে। টেকিটার উপরে পাশাপাশি বসিয়া গম্ভীরমুখে কী যে তাহারা আলোচনা করিতেছিল তারাই জানে, সুপ্ৰভা দেখিয়া হাসিয়া বঁচে না। ডাক্তার নাকি বুড়া ? জগতে এত জায়গা থাকিতে, কথা বলিবার এত লোক থাকিতে, বুড়া টেকিঘরে বসিয়া আলাপ করিতেছে বকুলের সঙ্গে ! যা তো খোকা ডেকে আন ওদের। বুড়োকে বল মুখ হাত ধুয়ে নিতে,-খেতে টোতে দি। তোর বাবা কী খাবে তাও তো বলে দিলে না, টেকি ঘরে গিয়ে বসে রয়েছে?