পাতা:মানিনী - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানিনী।
১৭

আমি সহ্য করিতে পারি না—মুহূর্তের নিমিত্ত আমার চক্ষুর অন্তরাল হইলে আমি চতুর্দ্দিক অন্ধকার দেখি—তোমাকে আমি প্রাণের সহিত ভালবাসি—” প্রভৃতি বাক্য সকল কখন কেহ রাজকিশোরীর মুখে শ্রবণ করেন নাই। সর্ব্বদাই তাঁহাকে সংসারের কার্য্যে ঘুরিয়া বেড়াইতে হইত।

 শিক্ষিতা মানিনী তাঁহার স্বামীকে প্রাণের সহিত ভালবাসেন, এ বিশ্বাসে বিপিনের অন্তঃকরণ পরিপূর্ণ। কারণ, অফিস হইতে আগমন করিবামাত্রই মানিনী বিপিনের নিকট গমন করিয়া ইজি চেয়ারের উপর অর্দ্ধ-শায়িতভাবে উপবেশন করেন। জলখাবারের সময়ে, পূর্ব্বে আপনি অর্ধেক ভোজন করিয়া অবশিষ্ট উচ্ছিষ্ট(?) খাদ্য বিপিনকে প্রদান করেন। কারণ, খাদ্যের মধ্যে কোনরূপ বিষাক্ত দ্রব্য আছে কি না, তাহা পরীক্ষা না করিয়া উহা স্বামীকে কিরূপে প্রদান করিবেন? জল-পূর্ণ গ্লাসের জল পূর্ব্বে আপনি না পান করিয়াই বা কিরূপে উহা স্বামীর হস্তে প্রদান করেন? সুতরাং মানিনী যেরূপ ভাবে স্বামীকে ভক্তি করিয়া থাকেন, সেইরূপ ভাবে এ দেশীয় কয়টী অশিক্ষিতা স্ত্রীলোক স্বামীভক্তি দেখাইতে পারে? ইহা ব্যতীত স্বামীর নিকট বসিয়া “প্রাণেশ্বর, প্রাণবল্লভ” প্রভৃতি অনিন্দদায়িনী ভাষায়, মানিনী বা মানিনী-সদৃশ শিক্ষিতা স্ত্রীলোক ভিন্ন আর কোন্ রমণী আপন পতির হৃদয় আনন্দে পূর্ণ করিতে সমর্থ হয়?

 অশিক্ষিতা রাজকিশোরী বৈকালে রন্ধনাদির উদ্যোগ করিতে পুনরায় ব্যস্ত হইয়া পড়েন, এবং রন্ধনাগারে প্রবেশ করিয়া উনানে ফুঁ পাড়িতে পাড়িতে মুখমণ্ডল ঘর্ম্মে আপ্লুত করিয়া ফেলেন। কিন্তু শিক্ষিতা মানিনী নূতন সাজে সজ্জিত হইয়া, পাউডারে মুখ