পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট
১১৫

লীলাকে মিলিয়ে নিয়ে একটি অখণ্ড লীলা। নিজের জীবনে যা বোধ করচি, যা ভোগ করচি, চার দিকে ঘরে ঘরে জনে জনে মুহূর্ত্তে মুহূর্ত্তে যা-কিছু উপলব্ধি চলেচে, সমস্ত এক হয়েচে একটি বিরাট অভিজ্ঞতার মধ্যে। অভিনয় চলেচে নানা নটকে নিয়ে, সুখদুঃখের নানা খণ্ডপ্রকাশ চলচে তাদের প্রত্যেকের স্বতন্ত্র জীবযাত্রায়, কিন্তু সমস্তটার ভিতর দিয়ে একটা নাট্যরস প্রকাশ পাচ্চে এক পরম দ্রষ্টার মধ্যে যিনি সর্ব্বানুভূঃ। এত কাল নিজের জীবনে সুখদুঃখের যে-সব অনুভূতি একান্তভাবে আমাকে বিচলিত করেচে, তাকে দেখতে পেলুম দ্রষ্টারূপে এক নিত্য সাক্ষীর পাশে দাঁড়িয়ে।

 এমনি ক’রে আপনা থেকে বিবিক্ত হয়ে সমগ্রের মধ্যে খণ্ডকে স্থাপন করবামাত্র নিজের অস্তিত্বের ভার লাঘব হয়ে গেল। তখন জীবনলীলাকে রসরূপে দেখা গেল কোনো রসিকের সঙ্গে এক হয়ে। আমার সে দিনকার এই বোধটি নিজের কাছে গভীরভাবে আশ্চর্য্য হয়ে ঠেকল।

 একটা মুক্তির আনন্দ পেলুম। স্নানের ঘরে যাবার পথে একবার জানলার কাছে দাঁড়িয়েছিলুম ক্ষণকাল অবসর যাপনের কৌতুকে। সেই ক্ষণকাল এক মুহূর্ত্তে আমার সামনে বৃহৎ হয়ে উঠল। চোখ দিয়ে জল পড়চে তখন, ইচ্ছে করচে সম্পূর্ণ আত্মনিবেদন ক’রে ভূমিষ্ঠ

১৬