পাতা:মায়া-পুরী - রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ১৮ ] করিলে মাথার মগজ কিলবিল করিয় উঠে । মনুষ্যদেহ যন্ত্রমাত্র ; বাহ-শক্তির উত্তেজনায় সেই যন্ত্র সাড়া দেয়। কিন্তু আমার মাথার খুলির ভিতরে যে এমন কাগু হইতেছে, আমি তাহার কিছুষ্ট জানিতে পারি না। ঐ সকল জাগতিক শক্তির সহিত, ঐ সকল আঘাতপরম্পরার সহিত আমার মুখ্যতঃ কোন ও সম্পর্ক নাই । আমার সহিত মুখ্য সম্পর্ক কয়েকটা অনুভূতির ; পাঁচটা ইন্দ্রিয়ে আঘাত করিলে পাচ রকমের অনুভূতি জন্মে—শব্দ, স্পৰ্শ, রূপ, রস, গন্ধ । মাথার খুলির ভিতর কিলবিলের কথা আমি কিছুই জানি না ; আমি জানি কেবল রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ। এই শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধের সহিত আমার মুখ্য সম্পর্ক, অথবা একমাত্র সম্পর্ক। কেন না আমার পক্ষে জগৎ, যে জগৎকে আমি জানি, সেই জগৎ রূপ-রস-গন্ধশব্দ-স্পর্শময় । রূপ-রস-গন্ধ-শব্দ-স্পর্শহীন জগৎ যদি থাকে, তাহ। আমার জ্ঞানগোচর নহে । এই রূপ রস গন্ধ শব্দ স্পর্শ যে আমি অনুভব করিতেছি, ইহাই আমার জ্ঞান ; আমি ইহাই জানি, বাহ জগৎ সম্পর্কে আর কিছু জানি না । জীবনহীন যন্ত্রের এই বোধ নাই । ঘটিকাযন্ত্র বা এঞ্জিনযন্ত্র রূপ রস সম্বন্ধে বোধহীন ; অতএব বাহাজগৎ সম্বন্ধে ও সে একেবারে জ্ঞানহীন। আবার জীবন থাকিলেই যে এই জ্ঞান থাকিবে, তাহ জোর করিয়া বলিতে পারি না । কেঁচো কিংম্বা জোক বাহ্যজগতের উত্তেজনা পাইলে সাড়া দেয়,—জড়যন্ত্রে যেমন সাড়া দেয়, তার অপেক্ষ। অনেক ভাল সাড়া দেয়,—কিন্তু বাহাজগৎসম্বন্ধে কেঁচোর বা জোকের কোনরূপ জ্ঞান আছে, ইহা খুব জোরের সহিত কেঁচো-তত্ত্ববিৎ বলিতে পারেন না। জীবজগতের খুব উচ্চ প্রকোষ্ঠে যাহাজের বাস, তাহাদেরই এই জ্ঞান আছে, আমরা অনুমানপূর্বক বলিতে পারি।