পাতা:মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা

করার নামই কি বিপ্লব? হ্যাঁ তাই, কারণ এই অসভ্য ভারতীয় সমাজকে সুসভ্য করে গড়ে তুলতে আর কোনো রাস্তাই মার্কস খুঁজে পাচ্ছেন না এবং এইভাবে বিপ্লব রপ্তানী করে ইংরাজরা ভারতের যে মহান উপকার করে চলেছে তার প্রশংসা না করে পারছেন না। তাই লিখছেন, “বৃটিশের যত দোষই থাক না কেন, তবুও সে নিজের অজান্তেই এই বিপ্লবের কাজ করে যাচ্ছে।” তাহলে প্রশ্ন থাকছে যে, এই রকম একটা বিপ্লব ঘটাবার জন্যই কি আমাদের মার্কসবাদীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন? তাহলে তাঁদের এই পরামর্শই দিতে হয় যে, কেন তাঁরা আর বৃথা খাটাখাটি করবেন? তার থেকে বরং বৃটিশদের বা অন্য ইয়োরোপীয়দের ডেকে নিয়ে আসুন। তাঁরা সেই বিপ্লব অনেক ভালভাবে এবং অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে করতে পারবে।


মার্কসের ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ:

 উপরিউক্ত মন্তব্যগুলির মধ্যে মার্কসের একটি মন্তব্য বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। বাংলার বয়নশিল্পীদের তিনি অর্ধবর্বর ও অর্ধসভ্য বলেছেন। এখানে আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, এককালে বাংলার রেশম ও সূতীবস্ত্র ছিল পৃথিবীর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট এবং ঢাকার মসলীন কাপড়ের কথা বিশদভাবে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বাংলার এই উৎকৃষ্ট সুতী ও রেশম বস্ত্রই খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে রোমের ঐতিহাসিক প্লীনি (প্রথম)-কে দুঃখ করে বলতে বাধ্য করেছিল যে, ঐসব শৌখিন বস্ত্র আমদানী করতে প্রচুর সোনা ও রূপার বাট (bullion) ভারতে চলে যাচ্ছে। ঐ উৎকৃষ্ট বস্তুসামগ্রীই ১৭০০ ও ১৭২০ সালে (আজকের অতিশয় সভ্য) বৃটেনের পার্লামেণ্টকে বাধ্য করেছিল আইন করে বৃটেনে তার আমদানী বন্ধ করতে। কারণ একই, বহু সোনা-রূপা খরচ হওয়া। উপরন্তু ঐ আইনে এটাও বলা হয়েছিল যে, কোনো বৃটেনবাসী ভারতে প্রস্তুত কাপড় অন্যায়ভাবে ব্যবহার করলে ২০০ পাউণ্ড জরিমানা হবে। এক মহিলার কাছ থেকে জরিমানা আদায়ও করা হয়েছিল।

 কাজেই ঐ সব শ্রদ্ধাভাজন নিপুণ শিল্পীদের অর্ধবর্বর ও অর্ধসভ্য বলে, নিজের পাহাড় প্রমাণ অজ্ঞতা প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে, মার্কস তাঁর শালীনতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছেন। ঐ একটি উক্তির জন্য মার্কসের সমস্ত রচনা ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়া উচিত। প্রকৃতপক্ষে সেটাই হবে মার্কসের ঔদ্ধত্য ও অসভ্যতার সমুচিত জবাব এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্মান রক্ষার অন্যতম উপায়।

 কিন্তু উচিত হলেও আমরা তা করি না। কারণ বিগত হাজার বছর ধরে গোলামি করতে করতে আমাদের চামড়া গণ্ডারের মতোই মোটা হয়ে গেছে। আত্মসম্মানবোধ বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তার উপর বিগত ৫০ বছরের অপরিণামদর্শী, উদ্দেশ্যহীন এবং দেশপ্রেমহীন কংগ্রেসের শাসন সেই গোলামির মনোভাবের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। দেশের মানুষের মনে সামান্যতম জাতীয়তাবোধ বা স্বাভিমান জাগাতে পারেনি। তাই তো বিগত দু'শো বছর যারা আমাদের দেশ দখল করে শাসন করে গেল, আমাদের দেশবাসীর উপর অকথ্য অত্যাচার করে গেল, দেশকে লুণ্ঠন করে নিজেদের উদর স্ফীত করল, আমাদের মা-বোনের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেললো, ভারতের মাটিতে পা রাখলে যে পাপিষ্ঠদের কুকুরের মতোই তাড়ানো উচিত, তাদের আবার আমরা সম্মান করে ডেকে নিয়ে আসি— আমাদের সর্বপ্রধান জাতীয় উৎসব, প্রজাতন্ত্র দিঝসর কুচকাওয়াজে তাদের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান অতিথি বানাই।