পাতা:মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা
১৯

মার্কসবাদীদেরও ভারতের প্রতি, তাদের মাতৃভূমির প্রতি কোনো আনুগত্য ও শ্রদ্ধা নেই। এককালে তাদের সমস্ত আনুগত্য ছিল রাশিয়া তথা মস্কোর প্রতি এবং আজ চিন তথা বেজিং সে স্থান দখল করেছে। তাই চিন পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে আমাদের মার্কসবাদীরা পুলকিত হন। কিন্তু নিজের দেশ ভারত তা করলে এই মীর্জাফরের দল তাকে নিন্দা করে। চিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করলে এই সব ঘৃণ্য ব্যক্তিরা আনন্দিত হন, কিন্তু সেই পরীক্ষা ভারত করলে তাকে টাকা পয়সার অপব্যয় বলেন এবং এর দ্বারা গরিব মানুষের ডাল-রুটির যোগাড়ে কোনো সুবিধে হবে না বলে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেন।

 তাই এ কথা জোর দিয়ে অস্বীকার করা যায় না, ভবিষ্যতে যদি চিন ভারত আক্রমণ করে তবে এই মার্কসবাদীর দল ভারতের বিরুদ্ধে চিনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করবে না। এ প্রসঙ্গে পাঠকের হয়তো স্মরণ থাকতে পারে যে, ১৯৬২ সালে চিন ভারত আক্রমণ করলে দেশদ্রোহী মার্কসবাদীরা ভারতকেই আক্রমণকারী বলে দোষারোপ করেছিল এবং ’৭০-এর দশকে নক্‌শাল আমলে ঐ নক্শালবাদীরা আওয়াজ তুলেছিল—চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান। এককালের ভারত আক্রমণকারী দস্যু মহম্মদ ঘোরীর নামে আজ পাকিস্তান তার সব থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের নাম ‘ঘাউরি” রেখেছে এবং তাতেই ক্ষান্ত থেকেছে। কিন্তু নক্শালদের যে মনোভাব উল্লিখিত, স্লোগানের মধ্য গিয়ে প্রকাশ পেয়েছে তাতে অনুমান করা চলে যে তারা কোনো এক চিনা ব্যক্তিকে ভারতে এনে ভারতের সর্বোচ্চ পদে বসাতেও কুণ্ঠিত হবে না।


হিন্দুত্ব ভারতের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি:

 আজ থেকে প্রায় বছর পাঁচেক আগে এই বিতর্ক চরমে ওঠে যে, মহারাষ্ট্রের কোনো একটি রাজনৈতিক দল হিন্দুত্বের কথা বলে বা বিশেষ একটি ধর্মের আবেদন সামনে রেখে জনসাধারণের ভোট প্রার্থনা করে খুবই সাম্প্রদায়িক কাজ করেছে এবং সেই কারণে ভোট বাতিল করা উচিত। বিবাদ শেষ পর্যন্ত সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত যায়। বিগত ১৯৯৫ সালের ১১ ডিসেম্বর সুপ্রীম কোর্টের তিনজন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সেই মামলার ঐতিহাসিক রায়ে এই মত ব্যক্ত করে যে, হিন্দু শব্দের দ্বারা ইসলাম বা খ্রিস্টধর্মের মত বিশেষ কোনো ধর্মমতকে বোঝায় না। হিন্দু শব্দের অর্থ আরও ব্যাপক এবং প্রকৃতপক্ষে হিন্দুত্বের দ্বারা একটি বিশেষ সভ্যতা বা সংস্কৃতিকে বোঝায়, যা বিগত হাজার হাজার বছর ধরে এই ভারতবর্ষে চলে আসছে। কাজেই হিন্দুত্বের কথা বলে ভোট চাওয়া কোনো মতেই সাম্প্রদায়িক কাজ নয়। এখানে আরও লক্ষণীয় ব্যাপার হল এই যে, উপরিউক্ত কারণের জন্যই প্রাচীন ভারতীয় যে কোনো বিদ্যাচর্চার শাখাকে পণ্ডিতরা হিন্দু নামে অভিহিত করেন — যেমন, হিন্দু গণিত, হিন্দু জ্যোতিষ, হিন্দু অর্থনীতি ইত্যাদি। বেশি দূরে যাবার প্রয়োজন নেই। এই রীতি অনুসরণ করেই আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় তাঁর রচিত প্রাচীন ভারতীয় রসায়নের নাম “হিন্দু রসায়নের ইতিহাস” রেখেছেন।

 কিন্তু শ্রীমোহন দাস গান্ধী ও শ্রীজহরলাল নেহেরু এই ভারতে বিচিত্র এক সেকুলার তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করে গেছেন যার মতে হিন্দু নামাঙ্কিত যে কোনো গ্রন্থ, পুস্তক, বক্তৃতা, কথাবার্তা সবই সাম্প্রদায়িক বলে নিন্দিত হচ্ছে। উল্লিখিত সুপ্রীম কোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে গালে এক প্রচণ্ড থাপ্পড় খাওয়া সত্ত্বেও সেকুলারবাদীবা তাদের সেই বিচিত্র সেকুলারবাদ আজও অনুকরণ করে