পাতা:মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা.pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা

ড্রাগের কাফে গজিয়ে উঠেছে যেখানে যে কেউ পয়সা দিয়ে ড্রাগ খেতে পারে। এই কারণেই পাশ্চাত্যে আজ সমকামীদের (বিশেষ করে দুই সমকামী পুরুষের মধ্যে) বিবাহ আইনত সিদ্ধ। এই কারণেই আমেরিকায় যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো দোকান থেকে যে কোনো রকমের আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে পারে, কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ভারতীয় মতে সমাজের স্বার্থ সকলের উপরে এবং তারপরে ব্যক্তিস্বার্থ বা ব্যক্তিস্বাধীনতা। যে ব্যক্তিস্বাধীনতা সমষ্টির ক্ষতি সাধন করে সে ব্যক্তিস্বাধীনতা ভারতে স্বীকৃত নয়। তাই সমাজের পক্ষে শুভ ও মঙ্গলজনক বলে যে সমস্ত নিয়ম-নীতি ধর্মের স্বীকৃতি লাভ করেছে, হিন্দু সংস্কৃতিতে তার স্থান সকলের উপরে। রাজা তো বটেই, এমন কি ঈশ্বরও ধর্মের অধীন। ধর্মকে অতিক্রম করার সাধ্য কারও নেই। হিন্দু মতে যে কোনো প্রাণীপীড়ন অধর্ম। পরের অনিষ্ট চিন্তা অধর্ম। শঠতা ও বঞ্চনাহীন বৃত্তি গ্রহণ করাই ধর্ম। শুধু প্রাণ রক্ষার জন্য ধন উপার্জন করাই ধর্ম, বেশি ধনের চেষ্টা করা অধর্ম। আহার, নিদ্রা ও মৈথুন মানুষ ও পশু উভয়ের মধ্যেই বিদ্যমান কিন্তু ধর্মই মানুষকে পশু থেকে পৃথক করেছে। তাই ধর্মহীন মানুষ পশুমাত্র, ধর্মহীন সমাজ পশুর সমাজ, অরাজক মাৎস্যন্যায়ের সমাজ।

 উপরিউক্ত ধর্ম সম্বন্ধে মনুসংহিতা বলছে,

ধৃতিঃ ক্ষমা দমোহস্তেয়ং শৌচমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃ।
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো দশকং ধর্মলক্ষণম্॥

 — অর্থাৎ ধৃতি (সন্তোষ), ক্ষমা, দম (বিষয় সংসর্গে মনের অবিকার), অস্তেয় (চুরি না করা), শৌচ (দেহশুদ্ধি), ইন্দ্রিয়সংযম, ধী (সংশয় বিলোপকারী সম্যক বুদ্ধি), বিদ্যা (আকিঞ্চন), সত্য ও অক্রোধ, এই দশটি ধর্মের লক্ষণ। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ধর্মপথে চলেন তাঁর মধ্যে এ-সকল গুণ বিকশিত হয়। ধর্মের এই ব্যাখ্যার মধ্যে মানবিকতার চূড়ান্ত উৎকর্ষের কথাই বলা হয়েছে। এ ধর্ম সমগ্র মানবজাতির জন্য, বিশেষ কোনো মানবগোষ্ঠীর জন্য নয়। স্বামীজি বলেছেন, “যাহাই মানুষকে উন্নত করে তাহার নাম ধর্ম। পশুত্বকে দূর করিতে হইবে, মানবত্বকে দেবত্বে লইয়া যাইতে হইবে।” এই পৃথিবীতে একমাত্র হিন্দুই বিশ্বাস করে যে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই দেবত্ব লুকিয়ে আছে এবং সাধনার দ্বারা মানুষ নিজেকে সেই দেবত্বে উন্নীত করতে সক্ষম। ধর্ম হল সেই সাধনার পথ। ধর্মই মানুষকে, মানবত্বকে অতিক্রম করে দেবত্বে পৌঁছে দেয়।


পাশ্চাত্যের রিলিজিয়ন:

 পাশ্চাত্যের খ্রিস্টধর্ম ও আরবের ইসলাম রিলিজিয়নের প্রকৃত উদাহরণ। এদের তুলনা করা চলে আজকের বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে। এই সব কোম্পানিগুলো যেমন বলছে, একমাত্র তাদের তৈরি সাবানেই জামা-কাপড় পরিষ্কার হবে বা তাদের তৈরি দাঁতের মার্জনেই দাঁত পরিষ্কার হবে, অন্য সব কোম্পানির সাবান বা মাজন সব বাজে মাল। এই রিলিজিয়ন দুটিও দিনরাত ওই একই কথা বলে চলেছে। বিক্রির জন্য তারা তাদের উপাসনা পদ্ধতির মতবাদকে হাজির করে বলছে যে, একমাত্র তাদের মতকে অনুসরণ করলেই পরিত্রাণ পাওয়া যাবে, স্বর্গলাভ হবে। অন্য কোনো মত অবলম্বন করে স্বর্গে যাওয়া অসম্ভব। উপরন্তু তারা আরও বলছে যে, তারা যে ঈশ্বরের ভজনা করে সে-ই একমাত্র খাঁটি ঈশ্বর এবং অন্যান্য লোকেরা যে ঈশ্বরের ভজনা করে তা মেকী ঈশ্বর। তারা যে পথ অনুসরণ করে চলেছে