পাতা:মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা
২৭

একজনই আছেন। যে যার মত অনুসরণ করে ঈশ্বরের করুণা বা কৃপা লাভ করতে সক্ষম। কাজেই এটা সহজেই অনুমান করা চলে যে, যাঁরা বলেন— সব ধর্মই এক তাঁরা তাঁদের সীমাহীন অজ্ঞতা থেকেই এই সব কথা বলে থাকেন। এই সব অজ্ঞ ব্যক্তিরা প্রায়শই মুসলমানদের নিষ্ঠাবান মুসলমান হতে পরামর্শ দেন, কিন্তু তাঁদের জানা নেই যে, সেই ব্যক্তি নিষ্ঠাবান মুসলমান হলে তাঁর ধড় থেকে মাথা নেমে যাবে। কারণ নিষ্ঠাবান মুসলমানের সর্বপ্রথম কর্তব্যই হল বিধর্মীকে হত্যা করে স্বর্গের পথ পরিষ্কার করা।


হিন্দু সংস্কৃতির মূল ভিত্তি ত্যাগ:

 অনাদি কাল থেকে যে জনগোষ্ঠী আসমুদ্র হিমাচল ভারতবর্ষ নামক এই সুজলা-সুফলা ভূখণ্ডে বসবাস করে আসছে এবং যারা এই পবিত্র ভূখণ্ডকে তাদের ‘স্বর্গাদপি গরীয়সী’ মা বলে মনে করে তারাই হিন্দু। আর এই হিন্দু জাতি হাজার হাজার বছর ধরে যে জীবনযাত্রা প্রণালী, ধর্মবিশ্বাস, দর্শন, সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান, সুকুমার কলা এবং এক কথায় যে সভ্যতা ও সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে তাই হিন্দুত্ব। কাজেই হিন্দুত্ব বলতে শুধু একখানা কোরান বা শুধু একখানা বাইবেল বোঝায় না। বাইবেলখানা পড়ে ফেললে একজন খ্রিস্টানের আর জানার কিছু বাকি থাকে না, বা কোরানখানা পড়ে ফেললে একজন মুসলমানেরও আর কিছু জানার বাকী থাকে না। পক্ষান্তরে হিন্দুত্বকে জানতে হলে সেই জিজ্ঞাসুকে যে বিশাল জ্ঞানভাণ্ডারের মধ্যে প্রবেশ করতে হবে, যে সূক্ষ্ম যুক্তিজালের সম্মুখীন হতে হবে এবং যে অপরিমেয় ধীশক্তির পরিচয় দিতে হবে তা বিস্ময়কর। সারাজীবন নিষ্ঠার সঙ্গে অনুশীলন করেও তিনি যে সে জ্ঞানভাণ্ডারের সমস্ত শাখা-প্রশাখাগুলিকে সম্যক উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন তা নিশ্চয় করে বলা যায় না। ম্যাক্সমূলর, শোপেনআওয়ার, ডয়সন, উইলসন, হাণ্টার প্রভৃতি ইয়োরোপীয় মনীষীগণ, যাঁরাই হিন্দুত্বকে জানার বাসনা নিয়ে এর মধ্যে প্রবেশ করেছেন, তাঁরাই এর বিশালতা উপলব্ধি করে বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছেন, এর উদারতার কাছে শ্রদ্ধায় মাথা নত করেছেন এবং সারাজীবন এর কল্যাণময়ী বাণীর সাথে নিজেদের লীন করে দিয়েছেন।

 সমগ্র হিন্দু সভ্যতা ও সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে আছে একটা মূল বৈদিক সত্যের উপর——সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম। অর্থাৎ এই বিশ্বে দৃশ্য অদৃশ্য যা কিছু আছে তা সবই এক মূল চৈতন্যময় সত্ত্বা ব্রহ্ম-এর বিভিন্ন রূপ মাত্র।

যথা সুতীপ্তাৎ পাকাদ্বিস্ফুলিঙ্গাঃ
সহস্রশঃ প্রভবন্তে সরূপাঃ।
তথাহক্ষরদ্বিবিধাঃ সৌম্য ভাবাঃ
প্রজায়স্তে তত্র চৈবাপিযন্তি।।

 —যেমন এক প্রজ্বলিত অনল থেকে সহস্র সহস্র অগ্নিকণা নির্গত হয়, হে সৌম্য, সেইরূপ এক অক্ষর (ব্রহ্ম) থেকে সব কিছু জাত হয় এবং তাহাতেই বিলীন হয়। তাহলে মানুষসহ সমস্ত প্রাণীও এক ব্রহ্মেরই বিভিন্ন রূপ। আমি নিজেও সে ব্রহ্মেরই একটি রূপ। তাই বেদান্ত বলে—“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম” এবং “অহং ব্রহ্মাস্মি”। অর্থাৎ সবকিছুই ব্রহ্ম এবং আমিও সেই ব্রহ্ম। এই একটি সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষে তো বটেই, মানুষের সঙ্গে প্রাণিজগৎ তথা সমগ্র প্রকৃতির সমস্ত রকমের প্রভেদ নিমেষে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। তখন ঘৃণাই বা করবে কাকে, আঘাতই বা করবে কাকে? অপরকে ঘৃণা করলে তো নিজেকেই ঘৃণা করা হয়, অপরকে