পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

দিতে দিতে বললো, আজকাল চাই মানুষের মধ্যে এই বিদ্রোহকে উস্‌কে দেওয়া। ভাবে তো সবাই, কিন্তু গোপনে নিজের মনে। তাতে চলবে না। মানুষকে মুক্তকণ্ঠে জোর গলায় বলতে হবে। আর, একজনকে প্রথম এই কাজে ব্রতী হয়ে পথ দেখাতে হবে। কতকগুলি অসংবদ্ধ ছাড়া-ছাড়া চিন্তায় চলবে না, একটা কর্তব্য স্থির ক’রে কাজের সূত্রে সেগুলোকে গেঁথে তুলবে হবে।···

 বিছানা পাতা হ’লে মা শুয়ে পড়লেন। তেতিয়ানা বললো, আপনিও প্রার্থনা করেন না?···আমিও মনে করি, ভগবান নেই, মানুষকে বোকা বানাবার জন্য এসবের আমদানি হয়েছিল।

 মা বললেন, আমি যীশুতে বিশ্বাস করি। কিন্তু ভগবান? জানিনে! তিনি যদি থাকবেনই তা’হলে তাঁর মঙ্গল-শক্তি হতে আমরা বঞ্চিত কেন? কেন তিনি মানুষকে দুটো ভাগে বিচ্ছিন্ন হ’তে দিলেন? কেমন ক’রে তাঁর রাজ্যে সম্ভব হয়, মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং উপহাস, অন্যায় ও পাশব আচরণ?

 আমার সন্তান দু’টির মৃত্যুর জন্য দায়ি কে···মানুষই হ’ক আর ঈশ্বরই হ’ক—আমি তাকে কখনো ক্ষমা করবো না···কখ্‌খনো না।

 মা সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, তোমার তো ছেলে হবার বয়স যায়নি, মা!

 তেতিয়ানা খানিকক্ষণ চুপ ক’রে রইলো, তারপর ধীরে ধীরে, বললো, না, মা, ডাক্তার বলেছে, আমার আর ছেলে হবে না।

 এই রিক্ত-সন্তান নারীর বুকের ব্যথা বুঝে মা নীরব হ’য়ে রইলেন।

 স্বামী-স্ত্রী মাকে শুইয়ে রেখে নিজেরাও শুয়ে পড়লো।

১৭৭