পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

তবু তাদের মাঝে যেটুকু প্রাণ আছে, যতটুকু সাধুতা আছে, তা’ ওদের মধ্যে নেই—ব’লে হাত তু’লে সে দূরদূরান্তরের কাদের নির্দেশ করে।

 মা বললেন, কিন্তু, মা, কেন তুমি নিজের আত্মীয়স্বজন সুখ-সাধ সব ত্যাগ করে এসেছে?

 ম্লান হাস্যে ন্যাটাশা বলে, আত্মীয়স্বজন, সুখ-সাধ···কিছু নয় মা! শুধু মার কথা ভেবে কষ্ট হয়···তােমারই মতাে সে···মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় তাঁকে দেখি।

 মা মাথা নেড়ে দুঃখিত কণ্ঠে বলেন, আহা, বাছা আমার!

 ন্যাটাশা কিন্তু জবাবে খিলখিল করে হেসে ওঠে, বলে, না, মা, দুঃখ কোথায়! মাঝে মাঝে এতাে আনন্দ, এতাে সুখ আমি পাই···বলতে বলতে তার মুখ প্রশান্ত হয়, তার নীল চোখে বিদ্যুৎ খেলে যায়। মার কাঁধে হাত রেখে স্বপ্নাবিষ্টের মতাে শান্ত, আন্তরিকতাপূর্ণ ভাষায় বলে, যদি জানতে, মা, যদি বুঝতে কী মহান্, কী আনন্দময় কাজ আমরা ক’রে যাচ্ছি—একদিন বুঝবে!

 মার যেন ঈর্ষা হয় ন্যাটাশার ওপর, বলেন, আমি বুড়ো, বােকা, কিইবা বুঝি।

 পেভেলের বক্তৃতা ক্রমশ বাড়ে। আলােচনার সুর ক্রমশ চড়তে থাকে···আর তার শরীর হয় ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর। সে যখন ন্যাটাশার সঙ্গে কথা কয়, মা দেখেন যেন তার কণ্ঠ মধুর, তার দৃষ্টি কোমল, তার সমস্ত চেহারা সহজ সরল হ’য়ে আসে। ন্যাটাশাকে পুত্রবধূরূপে কল্পনা করে মা অন্তরে অন্তরে পুলকিত হ’য়ে ভগবানকে বলেন, তাই করো ঠাকুর।

 আলােচনার সুর যখন সপ্তমে ওঠে, এণ্ড্রি সটান দাঁড়িয়ে তাদের কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

৩১