পাতা:মা - ম্যাক্সিম গোর্কি - বিমল সেন.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মা

 না, মা! সে বিগড়াবে না, এটা ধ্রুব সত্য ব’লে ধরে নিতে পারো।

 শশেংকা ধীরে ধীরে বললো, কী শক্তিমান পুরুষ এই পেভেল!

 মা বললেন, সে ঠিক। অসুস্থ সে কখনো হয়নি।···কিন্তু তুমি যে শীতে কাঁপছ, দাঁড়াও, চা আর জ্যাম এনে দিচ্ছি।

 মৃদুহাস্যে শশেংকা বললো, তোফা কিন্তু মা এত রাতে তোমার কিছু করবার দরকার নেই, আমি নিজ হাতেই করছি।

 হ্যাঁ, তা বৈকি। এই রোগা ক্লান্ত শরীর নিয়ে—নয়? তিরস্কারের সুরে এই কথা ব’লে মা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন। শশেংকাও গেলো তাঁর পিছু-পিছু। মা চা করছেন, আর সে একটা বেঞ্চিতে ব’সে পড়ে বললো, হাঁ, মা, সত্যিই আমি বড়ো ক্লান্ত। জেলখানা মানুষকে নির্জীব ক’রে দেয়। এই বাধ্যতামুলক কম হীনতাই হচ্ছে সেখানকার সব চেয়ে ভয়ের কথা। এর চেয়ে পীড়াদায়ক আর কিছু নেই। এক হপ্ত। থাকি, পাঁচ হপ্তা থাকি—বাইরে কতো কাজ করার আছে তাতো জানি। জানি যে, মানুষ আজও জ্ঞানের জন্য বুভুক্ষিত—আমরা তাদের অভাব পূর্ণ করতে সক্ষম কিন্তু কি করব, পশুর মতো বন্দী আমরা। এইটেই অসহ্য বোধ হয়—প্রাণ যেন শুকিয়ে যায় ৷

 মা বললেন, কিন্তু এর জন্য কে তোমাদের পুরস্কৃত করবে?··· তারপর ধীরে ধীরে দীর্ঘনিঃশ্বাসের সঙ্গে তিনিই তার জবাব দিলেন, ভগবান।—কিন্তু তাকে তো তোমরা বিশ্বাস করনা।

 না—শশেংকা সংক্ষেপে মাথা নেড়ে বললো।

 নিজের ধর্ম্মবিশ্বাসের মর্ম্ম বুঝলে না তোমরা! ভগবানকে হারিয়ে জীবনের এপথে কেমন ক’রে চলবে তোমরা?···

 বাইরে জোর পায়ের শব্দ এবং কণ্ঠস্বর শোনা গেল। মা চমকে

৬৪