বেলায় যেমন আদর করিতেন সেইরূপ আদর করিয়া বলিলেন “ও আমার বাছল রে, তালগাছডারে, তোকে আমি ত্যাগ করিব! আপনার সন্তানকে আমি ত্যাগ করিব?” পিতার স্কন্ধে ব্যথিত মস্তক রাখিয়া ভীলপুত্র কাঁদিতে লাগিল, আগেও কাঁদিয়াছিল—এখনো কাঁদিল; এ কান্নায় আর সে কান্নায় কত তফাৎ! এইরূপ পিতার কাঁধে মাখা রাখিয়া, সুখের কান্না কাঁদিতে কাঁদিতে তাহার মরিতে ইচ্ছা হইল,—আর আগেও এক বার মরিতে চাহিয়াছিল, এই দুই রূপ মৃত্যুতে কত তফাৎ!
ভীলরাজ তাহার অশ্রু মুছাইতে মুছাইতে বলিলেন,
“তোর কি সিধু গোয়ালিনীকে মনে পড়ে, মা হইয়া সে সন্তানকে নদীর জলে বিসর্জ্জন দিয়াছিল মনে আছে কি? সন্তানের প্রতি তাহার কি মেহের অভাব ছিল বৎস! তাহাকে ভাসাইয়া সেই শোকে সেও কি প্রাণত্যাগ করে নাই? তবে সে এমন কাজ করিল কেন? সে জানিয়াছিল তাহা দেবতার কাজ, তাহা না করা তাহার ক্ষমতায় নাই, তাহা না করিলে তাহার সন্তানের মঙ্গল নাই। পুত্র, আমিও তোমাদের মঙ্গলের জন্যই, তোদের সত্য রক্ষার জন্যই—দেবতার কার্য্য জ্ঞানে তোমার স্থলে অন্যকে রাজ্য দিয়াছি। কিন্তু আমার হৃদয় আমার স্নেহ সে আর কাহারো নহে, তাহা তোমার জন্যই রহিয়াছে”