করিয়া তাহার সর্ব্ব কনিষ্ঠ বড় স্নেহের ঘুমন্ত ভাইটির মুখ চুম্বন করিল, অমনি দুই বিন্দু অশ্রু তাহার গাল বাহিয়া শিশুর গালে পড়িল,—ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া হঠাৎ শিশু সশব্দে হাসিয়া উঠিল, জানি না সে অশ্রুম্পর্শে শিশু হৃদয়ে কি স্বপ্ন জাগিয়া উঠিল। অন্য সময় হইলে ভীলপুত্র কত না আল্লাদে তাহাকে বুকে চাপিয়া ধরিত, আজ হাসি শুনিয়া সে ভীত হইল,ঘরে দাঁড়াইতে আর তাহার সাহস হইল না—ধীরে ধীরে দ্বারাভিমূখে সে পদ নিক্ষেপ করিল, এই সময় তাহার মা একবার অস্ফুটস্বরে ‘তালগাছ’ বলিয়া ডাকিয়া উঠিলেন—ভীলপুত্র চমকিয়া তাড়াতাড়ি ঘরের বাহির হইয়া পড়িল—বুঝি এইবার সে ধরা পড়ে। কিন্তু তখনি বুঝিল তাহার মা জাগিয়া ডাকেন নাই, তাহা তাঁহার ঘুমন্ত ডাক। বাহিরে আসিয়া আর সে নয়নজল রাখিতে পারিল না—তাহার বুকফাটা নিস্তব্ধ অশ্রুজলের মধ্যে সেই কুটীর, সেই কুটীরের মধ্যে যে সব স্নেহ মমতা ফেলিয়া আসিয়াছে সেই সব ভাসিতে লাগিল, আর সে ঘরের মধ্যে যাহাকে খুঁজিয়া পায় নাই যাহাকে দেখিবার জন্য বড় ব্যাকুল হইয়া আসিয়াছিল তাহাকে একবার দেখিবার জন্য অধীর হইয়া পড়িল।
পিতা কোথায়? তাঁহার ঘুমন্ত মুখখানি একবার শেষ বার দেখিতে পাইবে না? ভীলপুত্রের নয়নে অন্ধকার-হৃদয়ে মর্ম্ম যাতনা, সে অস্ত্রশালার দিকে দৃষ্টি