বার চারিদিক যেন ঈষৎ কাঁপিয়া উঠিল, সহসা গাছে গাছে পাখীগুলি একবার জাগিয়া উঠিয়া যেন শোকগীতি গাহিয়া উঠিল, তাহার পর আবার চারিদিক পূর্ব্বের নিস্তব্ধতার মগ্ন হইয়া গেল।
ভীল পুত্র যখন পিতার নিকটে আসিয়াছিল, গুহা তখন সেখানে ছিলেন না, তিনি উষ্ণীষ ভিজাইয়া ফিরিয়া আসিয়া আর তালগাছকে দেখিতে পাইলেন না, অল্পক্ষণের মধ্যেই সকল অবসান হইয়া গিয়াছে।
মন্দালিককে বাঁচাইবার জন্য গুহা যথাসাধ্য চেষ্টা করিলেন, প্রাণপণে শুশ্রুষা করিতে লাগিলেন, ক্ষীণ চাঁদ নিভিয়া গেলে, শ্যামল মধ্যস্থ লোহিত শতদলের ন্যায় কুয়াসার মধ্য দিয়া অরুণ-রেখা-রঞ্জিত পূর্ব্বগগণ যখন ফুটিয়া উঠিল, তখনো গুহা তাহার শুশ্রুষা করিতে ক্ষান্ত হইলেন না, তখনো আর্দ্র উষ্ণীয-জল নিঙড়িয়া মন্দালিকের মুখে দিতে লাগিলেন। কিন্তু যখন সূর্যালোক মন্দালিকের মৃত মুখের উপর পড়িল, তখন গুহার চমক ভাঙ্গিল, ধীরে ধীরে গভীর দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া আর্দ্র উষ্ণীষ ভূমিতে ফেলিয়া দিয়া হতাশ দৃষ্টিতে তাহার মুখপানে চাহিয়া রহিলেন—এক দিন আগে মালিক তাঁহাকে কত স্নেহের কথা বলিয়াছেন—আজ তিনি নীরব, —এক দিন আগে তিনি কি ছিলেন, আজ তাঁহার কি দশা!