তুলিল, কেবল মতি অরণ্য মহাকালের মত উদাস ভাবে এই সুখ দুঃখের প্রতি অবিচলিত দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল, —তাহার প্রাণে সে হাসি কান্না বিন্দুমাত্র স্পর্শ করিল না।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ।
দ্বিপ্রহর, সূর্য্য আকাশের মধ্য ভাগে—পাহাড়ের একটি উচ্চ শিখরের উপরে আসিয়া পড়িয়াছে—সেই শিখরকাশ খানিক দুর লইয়া এত উজ্জ্বল যে তাহার দিকে চাওয়া যায় না, আর সূর্য্যের পরিত্যক্ত পূর্ব্বাকাশ এত নীল যে দ্বিপ্রহরে সেখানে চন্দ্র দেখা যাইতেছে। সেই নীল আকাশচন্দ্রতপের গায়ে এক এক টুকরা শাদা শাদা মেঘ ভাসিতেছে, মেঘের নীচে ছোট ছোট পাখীগুলি বিন্দুর আকার ধরিয়াছে—বুঝি তাহারা চাতক পাখী—মেঘের সঙ্গে আপনাকে মিশাইয়া ফেলিতে যায়।—বড় বড় চীল দুই একটি পাতের মত সমান ভাবে পক্ষ বিস্তার করিয়া পলকহীন নিস্পন্দ গতিতে উড়িতেছে, আর মাঝে মাঝে কর্ক্কশ উচ্চ কণ্ঠে চিহিঁহিঁ করিয়া উঠিতেছে, সে চীৎকারে নিস্তব্ধ পাহাড় ঝাঁঝাঁ করিয়া উঠিতেছে, গাছের মধ্য হইতে কাকগুলা গম্ভীর ভাবে সাড়া দিয়া উঠিতেছে—তাহাদের কলরবে ঘুঘুর অবিশ্রান্ত ঘুঘুরব যেন চকিতের মত ঢাকিয়া পড়িতেছে!