পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রত্নবর্তী প্রথম পরিচ্ছেদ গুজরাট নগরের রাজপুত্রের সহিত সেই রাজ্যের মন্ত্রিপুত্রের অভেদ্য প্রণয় ছিল। রাজপুত্রের নাম স্বকুমার এবং মন্ত্রিপুত্রের নাম স্বমস্ত। স্বমস্ত বিস্তাবুদ্ধিতে রাজতনয় অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিলেন । র্তাহার বাল্যকালাবধি যৌবনকাল পর্য্যস্ত একত্র ভোজন, একত্র শয়ন এবং একসঙ্গে ক্রীড়াদি করাতে প্রণয়ের বিশেষ আধিক্য জন্মিয়াছিল। কিন্তু কালের কি আশ্চৰ্য্য গতি। ময়ূন্যের সৌভাগ্যশশী কখনই সমভাব থাকে না । সময়ে পূর্ণ ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। রাজকুমার সুকুমার এবং মন্ত্রিকুমার সুমন্তের মিত্রতা তাহারই প্রমাণ দিয়াছিল। একদা প্রভাকর দৈনিক কাৰ্য্য সমাধানান্তর লোহিত-বসনাবৃত হইয়। পশ্চিমাচলে গমনোদ্যোগ করিতেছেন, এমন সময় রাজনন্দন ও মন্ত্রিতনয় অত্যুৎকৃষ্ট বেশভূষায় ভূষিত হইয় প্রদোষকালে বিশুদ্ধ বায়ুসেবন করিতে বহির্গত হইলেন। ইতস্তত: নগরের সুচারু শোভা সন্দর্শন করিতে করিতে রাজনন্দন মুকুমার মৃদুমধুর সম্বোধনে প্রাণাধিক মিত্র মন্ত্রিপুত্রকে বলিলেন, সখে ! বল দেখি, ধন শ্রেষ্ঠ কি বিদ্যা শ্রেষ্ঠ ? মন্ত্রিপুত্র হাস্ত করিয়া বলিলেন, বন্ধো ! ইহা আর জিজ্ঞাস্ত কি ? ধন অপেক্ষ বিদ্যা সহস্র অংশে শ্রেষ্ঠ । এই বাক্য শ্রবণ করিয়া রাজনন্দন বিরক্ত হইয়া কিঞ্চিৎ উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন, না তাহা কখনই হইতে পারে না, আমরা সচরাচর দেখিতেছি ধনবানেরা জগজ্জনমধ্যে বিশেষ গণ্য ও আদরণীয় হন। তাহার কোন বিষয়ে নির্ধন লোকের ন্যায় চিন্তাজরে জর্জীভূত হন না, বিপদেও চিত্তস্থখ সম্ভোগ করিয়া নিশ্চিস্তে কালযাপন করেন । এমন কি তিলাৰ্দ্ধকালের জন্তও দুঃখিত থাকেন না। নির্ধন ব্যক্তি যতই কেন বিস্তাবুদ্ধিসম্পন্ন হউন না, তাহাদিগকে চিরদিন ধনীদিগের পদানত ভৃত্য থাকিতে হয়। তুমি বিবেচনা করিয়া দেখ, ধনহীন ব্যক্তির জন্মই বৃথা। ধনীরা বিপদাপন্ন নিরাশ্রয় ব্যক্তিগণকে ধনস্বারা নিরাপদ করিয়া আশ্রয় প্রদান করিতে সমর্থ হন। পরিবাদিগকে স্বচ্ছদে ভরণপোষণ করিয়া পরমানন্দ্বে কালাতিপাত করেন, এবং সমুদায় ধর্ণই তাহাজের আয়ত্তে থাকে। হুতরাং ধনই সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ। " "