পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথা ) ఇ3 করিয়াছে, কত অনাহারীর আহার দিয়া জীবন রক্ষা করিয়াছে, এক্ষণে তাহারাই একটি পয়সার জন্যে লালায়িত ! তাহাদের পেটে অন্ন নাই, গায়ে বস্ত্র নাই, থাকিবার স্থান নাই। হায় ! হায় ! তাহদের মা, ভগ্নী, স্ত্রী, মাসী, পিসীর উদরের দিকে চাহিলে কাহার না চক্ষু জলে ডুবিয়া যায় ? সে জীর্ণশীর্ণ শরীরে শত গ্রন্থিযুক্ত পরিধেয়ের প্রতি দৃষ্টি পড়িলে কাহার না অস্তরে ব্যথা লাগে ? সে দুঃখ কি আর মাচুষে চক্ষে দেখিতে পারে ? ঐ কেনীর দৌরাত্মা সহ্য করিতে না পারিয়া কত ভদ্রসন্তান, কত নিরীহ লোক পৈতৃক বাসস্থান পবিত্যাগ করিয়া কোথায় কোথায় কোন দেশে চলিয়া গিয়া জাতি, কুল, মান রক্ষা করিতেছে। যাহারা পৈতৃক ভিটার মায়া-মমতা একেবারে পরিত্যাগ করিতে পারে নাই, তাহারা যথাসর্বস্ব দিয়াও রক্ষা পায় নাই। নীল কাটা, হউজ মাই, নৌকাব গুণ টানান এইসকল কার্য্যে তাহদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হইয়া যাইতেছে । ইহাব পর আবার সময় সময় হাত-পা বান্ধিয়া গাছে লটকাইয়া চাবুকে পিঠের ছাল তুলিতেছে! উহু! কি ভয়ানক নরব্যাঘ্ৰ ! কি করিব, আমি দেশের রাজা নহি, সকলে আমার অধীন প্রজা নহে, এদেশের সকল জমিদারি প্যারীসুন্দরীর নহে। কি করিব, এদেশের আর কাহারও কিছু রাখিবে না। ও বেলাতী কুকুর এদেশের সকলকেই দংশন করিবে ! সে বিষে সকলেই জর্জরীভূত হইবে। প্রথমেই ঐ স্নেচ্ছের বিষদাত ভাঙ্গিয়া না দিলে শেষে আমার জমিদারি পর্য্যন্ত গ্রাস করিয়া ভস্মীভূত করিবে। আমাকে যে কিরূপ বিপদগ্ৰস্ত হইতে হইবে, তাহ ঈশ্ববই জানেন । শেষে কি স্বন্দরপুরের ঘরের মান ডুবিবে! হায় ! হায়! শেষে কি কেনীর হস্তে সুন্দরপুবের ঘর মাটি হইবে ? রামলোচন বলিলেন—“কেনীর সাধ্য কি যে আমাদের প্রজার উপর অত্যাচার করে। যে উপায়ে হয় আমি তাহাকে তুরস্ত করিব। কতকগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তালুকদারের বিষয়-সম্পত্তি বলপূৰ্ব্বক কাড়িয়া লইয়া তাহার মেজাজ গরমী চড়িয়াছে। আপনার আশীৰ্ব্বাদ থাকিলে যে উপায়ে হয় তাহাকে এমন শিক্ষা দিয়া দিব যে আর কখনও সুন্দরপুরের নাম স্বপ্নেও মুখে না আনেন—মনে না করেন। আর বাঙ্গালী হইলেই যে শেয়াল-কুকুর হয় তাহাও না ভাবেন।” এই বলিয়া রামলোচন বিদায় হইয়া আপন কৰ্ত্তব্য কার্য্যে চলিয়া গেলেন । রাত্রি এক প্রহর পর্য্যস্ত রামলোচন লাঠিয়াল যোগাড় করিয়া প্ৰজাগণের