পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রতুবতী (? পূৰ্ব্বক নৃপতিসন্নিধানে সভাম গুপে লইয়া গেল । রাজা যথোচিত সমাদরে নিকটবর্তী অপূৰ্ব্ব আসন গ্রহণ করিতে অনুমতি করিলেন। রাজনন্দন ভূপতিকে সবিনয় সম্ভাষণ করিয়া আসন পরিগ্রহ করিলেন । নৃপতি যুবরাজের ভুবনমোহন রূপলাবণ্য দর্শনে বিমোহিত হইয়া মনে মনে চিন্তা করিতে লাগিলেন, এই যুবকটি অবশ্যই কোন রাজকুল অলঙ্কত করিয়াছেন, কিন্তু আমার কন্যা কি দুর্ভাগ্যবতী , এইরূপ সুকুমারের অঙ্কলক্ষ্মী না হইয়া বরং যথাসৰ্ব্বস্ব হরণপূর্বক ইহাকে বিপদে পাতিত করিবে। যাহা হউক, এই উৎসাহোম্মুখ যুবককে সবিশেষ অবগত করাইয়া পূৰ্ব্বেই সতর্ক করা আমার কৰ্ত্তব্য হইতেছে। এইরূপ চিন্তা করিয়া নরপতি স্নানবদনে মুকু সম্বোধনে কহিলেন, বৎস! তোমার আকৃতি প্রকৃতি দেখিয়া আমার অন্তভব হইতেছে, তুমি কোন সন্ত্রান্ত বংশ বা রাজকুলে জন্ম পরিগ্রহ করিয়াছ, দেশ পর্য্যটন ব্যতীত তোমার অন্ত কোন অভিসন্ধি ছিল এরূপ বোধ হয় না। যাহা হউক, তুমি অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করিয়া ডস্কাধনি করাতে ইচ্ছা করিয়া বিপদহস্তে আত্মসমর্পণ করিয়াছ। কতশত রাজপুত্র অসংখ্য ধনরত্ন ও বিবিধ প্রকার আশ্চর্য্য বস্তু প্রদান করিয়া ও আমার অঙ্গজার মনস্তুষ্টি সাধন করিতে পারেন নাই। বিবাহ করিয়া সুখ-সম্ভোগ করা দূরে থাকুক, কারাগারে চিরকষ্ট ভোগ কবিতেছেন। আপনার সহিত ধনজন কিছুমাত্র দেখিতেছি না. কি প্রকাবে রাজকন্যার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করিবেন, বুঝিতে পারিতেছি না। বৎস! আমি পুনঃপুনঃ নিষেধ করিতেছি, ইচ্ছা করিয়া অনলে অঙ্গ বিসর্জন করিও না। স্ত্রীরত্বলাভলালসা পরিত্যাগ কর। আমার দুহিতার প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করিলে তখন আমার রক্ষা করিবার ক্ষমতা থাকিবে না। যুবরাজ নৃপতির বাক্য শুনিয়া মনে মনে নানা প্রকার আন্দোলন করিতে লাগিলেন। এখন উপায় কি করি। নুপদুহিতার অলৌকিক রূপলাবণ্য আমার মনোহরণ করিয়াছে, সুতরাং চিত্তবারণ ধৈর্য্যাঙ্কুশেও বারণ না মানিয়া সেই পদ্মিনী গ্রহণ করিতে প্রতিজ্ঞ সরোবরে ধাবিত হইতেছে। এইরূপ চিন্তা করিয়া কৃতাঞ্জলিপুটে কহিলেন, মহারাজ ! আপনার অমৃতময় উপদেশ আমার শিরোধীর্য্য ; তথাচ এই নিবেদন করিতেছি, আমি যাতনা সহ করিয়া যখন এ পর্য্যস্ত আসিয়াছি, তখন অভিলষিত রত্ন লাভ করিতে পারিব না বলিয়া স্বস্থানে প্রতিগমন করিব না। যাহা ভবিতব্যে লিখিত আছে, তাহাই ঘটিবে। আমি আপনার তমুজার মানস পূর্ণ করিতে সমর্থ কিন, ইহা আপনি কিরূপে বুঝিতে পারিলেন ? আমার সহিত ধনরত্ব ও রথ গজ নাই