পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথা x \מכ বুনানি করিবেন, সে জমি পিছে ফেলিয়া নির্দিষ্ট সীমায় দাড়াইয়া বুনানি ধান রক্ষা করিবে। সাহেবের লাঠিয়ালদিগকে আর সে জমির দিকে আসিতেই দিবে না । সে আশা বিফল হইল। কারণ সাহেবের লাঠিয়ালের পূৰ্ব্বেই ধানখেত পাছে করিয়া আপন আপন আয়ত্ব ও সুবিধা মত আনি (ব্যুহ ) বান্ধিয়া দাড়াইয়াছিল। দেখিতে দেখিতে প্রভাতবায়ু বহিয়া পূৰ্ব্বদিক পরিষ্কার করিয়া দিল । মশালের আলো মলিন হইযা মুখে ছাই মাখিয়া নিবিয়া গেল। পুনরায় উভয় দলের কথা চলিল। ক্রমে গালাগালি, শেষে লাঠালাঠির উপক্রম। ওদিকে কেনীর পক্ষ হইতে শতাধিক লোক লাঙ্গল-গরু জুড়িয়া ধান ভাঙ্গিতে আরম্ভ করিল। প্যারীসুন্দরীর কার্য্যকারক, যিনি হুকুম দেহেন্দী হইয়া আসিয়াছিলেন, ঘোড়া টপকাইয়া এদিক ওদিক দেখিতে দেখিতে দৈবাৎ সাহেবের সর্দারদিগের পিছনে বহুতর গরু ও লাঙ্গল দেখিযা বলিতে লাগিলেন, “ভাইসকল ! আর দাডাইয়া কি কর ওদিকে দফাবফ। ঐ দেখ, ধান ভাঙ্গিয়া নীল বুনিতেছে। আমবা যাহা ভাবিয়ছিলাম তাহ হইল না । সৰ্ব্বনাশ হইল ! সুন্দরপুর গিয়া কি জবাব দিব ?” প্যারীসুন্দরীর লাঠিয়ালের বিকট চীৎকাব করিয়া কেনীর লাঠিয়ালের প্রতি আক্রমণ করিল। বিপক্ষদলও বিশেয শিক্ষিত—কিছুতেই হেলিল না। আনি ভাঙ্গিল না—একপাও নড়িল না। লাঠি-উডসড়কি অবিরত চলিতে লাগিল । কেনীর লাঠিয়ালেবা কেবল আত্মবক্ষা করিতেছে, একপদও অগ্রসর হইতেছে না । কাৰ্য্যসিদ্ধি না হওয়া পৰ্য্যস্ত (ধান ভাঙ্গিয় নীল-বুনানি ) আক্রমণের নামও মুখে আনিবেন না, ইহাই তাহাদের স্থির-সংকল্প । এদিকে স্বৰ্য্যদেবের আগমন সহিত টি. আই. কেনী বৃহদাকার শ্বেতবর্ণ অশ্বে আরোহণ করিয়া ত্বরিদ্রবেগে আপন লাঠিয়ালদিগের পৃষ্ঠপোষক হইলেন। দেখিতে দেখিতে ধান ভাঙ্গিয়া নীল-বুনানি শেষ হইয়া গেল। সাহেব গভীরস্বরে বলিলেন, “আর দেথ কি, লাগাও !” স্বয়ং মনিবের হুকুম। পাঁচশত লাঠিয়াল একত্রে সেই বিকট চীৎকারে, মাঝে মাঝে ঋ-ঋ শব্দ করিয়া মনিবের সাহস ও উৎসাহবাক্যে ক্রমে অগ্রসর হইতে লাগিল। কেনী লাঠিয়ালদিগের পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন । প্যারীসুন্দরীর লাঠিয়ালের সাহেবকে স্পষ্টভাবে দেখিতেছে। অশ্ব উচ্চ, কেনীর শরীর উচ্চ,