পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S ૭૨ মীর মশাররফ হোসেন বচনাসংগ্ৰহ সকলের মাথার উপর মাথা—সে মাথার উপরে আরো উচ্চ টুপি। সকলেই দেখিতেছে যে, আজ কেনী স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে রহিয়াছেন। প্যারীসুন্দরীর লাঠিয়ালগণমধ্যে সড়কিওয়ালা সর্দাব অনেক ছিল । একজন সড়কিওয়ালা সর্দার টি. আই. কেনীর মস্তক লক্ষ্য করিয়া উড়সড়কি এমন কৌশলে নিক্ষেপ করিল যে, সাহেবের টুপি সড়কির আঘাতে মাটিতে পডিয়া গেল। মাথায় আঘাত লাগিল না। সাহেব অত্যস্ত ক্রুদ্ধ হইয়া দুই-তিনজন প্রধান প্রধান লাঠিয়ালেব পৃষ্ঠে চাবুক সই করিয়া করিয়া বলিতে লাগিলেন, “ড্যাম শুয়াব, কেবল ডাক ভাঙ্গিতে জান, পায়তারা করিতে জান, লাঠি ভাজিতে জান, মারিতে জান না ? লাগাও, তাড়াও, মার শুযার লোকৃকো—” লাঠিয়ালের হুকুমের জোরে চাবুকের জালায় বিপক্ষ দল প্রতি সজোরে লাঠি-সড়কি মারিতে আরম্ভ করিল, এবং ক্রমশই অগ্রসব—প্যারীসুন্দরীর লাঠিয়ালের আঘাতিত হইতেছে, কিন্তু পৃষ্ঠ দেখাইতেছে না, দৌডিয়া পলাইতেছে না। ক্রমে পিছে হঠিয়া আত্মরক্ষা করিতে কবিতে যাইতেছে। দুই-তিনটি লোক পিছে হঠিয়া যাইতে যাইতে দৈবাৎ উচ্চনিচু স্থানে যেই পডিয়াছে, অমনি সাহেবের লাঠিয়াল সড়কিদ্বারা আঘাত করিয়া বিন্ধিয়া ফেলিল, আর উঠতে দিল না। মানুষের রক্তের ধারা ছুটিল। কেহ উঠিয়া বসিতেই পড়িয়া গেল। কেহ মুখ গুজিয়া পড়িয়া রহিল। বক্তমাখা সড়কির দিকে দৃষ্টি কবিয়া প্যারীসুন্দরীর লাঠিয়ালগণ ঢাল, সড়কি, লাঠি ফেলিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে পলাইতে আবন্ত করিল। যে যেদিক সুবিধা বুঝিল, সে সেইদিকেই যথাসাধ্য দৌড়িল। হুকুম দেহেন্দ মহাশয় কোন সময় চম্পট দিয়াছিলেন, তাহ কেহই দেখিতে পায় নাই। টি. আই. কেনীর উৎসাহে তাহার লাঠিয়ালগণ অৰ্দ্ধক্রোশ পৰ্য্যন্ত বিপক্ষগণকে তাড়াইয়া লইয়া চলিল। শেষে তাহারা একেবারে দল ভাঙ্গ হইয়া ঝাড়েজঙ্গলে এবং সম্মুখে গ্রামের মধ্যে গিয়া প্রাণ বাচাইল। টি. আই. কেনী সদৰ্পে বলিতে লাগিলেন—”আর আগে বাড়িও না । এক্ষণে প্যারীসুন্দরীর প্রজাগণের বাড়ি-ঘর যাহা সম্মুখে পাও ভাঙ্গিয় ফেল। জিনিসপত্র লুটিয়া লও।” আদেশমাত্র লুঠ আরম্ভ হইল। থাল, ঘটি, বাটি এবং কৃষক-স্ত্রীদের গায়ের রূপার অলঙ্কার সর্দারগণ টানিয়া ছিড়িয়া খসাইতে আরম্ভ করিল। পাষণ্ডের গ্রীলোকদিগের পরনের কাপড় পর্য্যস্ত কাড়িয়া লইয়া কেহ মাজায়, কেহ মাথায়