পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩৪ মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্ৰহ সে কষ্ট সহ করিতে না পারিয়া কেনীর মনোমত দলিল লিখিয়া দিয়া প্রাণ বঁাচাইলেন । অমান্তষিক কয়েদ হইতে খালাস পাইলেন । সে সময় কুষ্টিয়া অঞ্চলে কেনীই রাজা, কেনীই প্রায় হৰ্ত্তাকর্তার মালিক। যা করে—কেনী । শালঘর মধুয়ার কুঠির দিন দিন উন্নতি। নীলের উন্নতি, রেশমের উন্নতি, চতুদিকে কেনীর নাম । কেনীর নামে পুরুষের পীলে কঁপে, গৰ্ভিনীর গর্ভপাত হয় । ছোট ছোট ছেলেরা কেনীর নামে ভয় পায় । কেনীর দৌরাত্ম্য আগুনে দেশের লোক জলিয়া পুড়িয়া খাক হইতে লাগিল। কুঠির নাম শুনিলেই হৃদয় কাপে । কুঠির সীমা-মধ্যে পা ধরিতে অনেকেরই প্রাণ কঁপিয়া—অঙ্গ শিহবিয়া উঠে—মুখ শুকাইয় যায়। কুঠির সম্মুখে কালীগঙ্গ। কালীগঙ্গার পশ্চিমপার দিয়া লোকজনের গতিবিধি ভিন্ন, কুঠির পাব—পূৰ্ব্ব পার দিয কেহই যাইতে সাহসী হয় না। নিকটবৰ্ত্তী জমিদার, তালুকদাব, সকলেই কুঠিব চটকা (বৃক্ষ বিশেষ) তলায পড়িয়া আপন আপন পীব-পয়গম্বর বা ইষ্টদেবতার নাম করিয়া থাকেন । কার ভালে কি হয় কে জানে । বিনা তলবে আপিস ঘবে কাহারও যাইবার অনুমতি নাই । কার সাধ্য সে আজ্ঞা লঙ্ঘন কবে ? বা বিপর্য্যয় ঘটায় ? ঘরাও বিবাদ, প্রজায় প্রজায় মারামাবি, স্বত্বাস্বত্বের বিচাব, খত পত্র তমঃস্তক ইত্যাদি যাবতীয় নালিশ সে সময় কেনী গ্রহণ কবিতেন —পরে শুনিয়াছি যে, কেনীব অনারারি মাজিষ্টারের ক্ষমতা ছিল। কুষ্টিয়ায় মহকুমা হয় নাই । জেলাও পদ্মার পার । জমিদার কেনী – বিচারকর্তা কেনী—মহারাজও কেনী । রাখেন তিনি, মারেন তিনি । যার; আগে থেকেই কেনীর পীয়ে মুজা চড়াইয়াছিলেন, তাহারা একটু আছেন ভাল। বিশ্বাস ছিল যে, বিচার না করিয়া আব গুদামে পুব্লিবে না। এ গুদাম—বড় ভয়ানক বন্দিখানা । সরকারী গুদামে পেট পুরিয়া না হউক, কয়েদী দুবেলা দুমুঠো ভাতের মুখ দেখিতে পায়। এ গুদামে তা নয়, এ বন্দিখানার সে কথা নয়, ইহার ভিন্ন ভাব-অন্য কারবার—বড় ভয়ানক স্থান ! সেখানে শুইবার বিছানা নাই, বালিশ-কাথা-কম্বলের নাম নাই। ভাতের মুখ দেখিবার ভাগ্যই নাই । আহারের ব্যবস্থা ধান —ধান বাছ, চাল বাহির কর, জলে মিশিয়ে গিলে ফেল ।