পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথা > 3 > হরনাথ মিশ্র প্রধান কাৰ্য্যকাবক বাসাবাড়িতে থাকিয়াই কুঠির সমুদয় অবস্থা স্বচক্ষে দেখিয়াছেন। এখন আর গোলযোগ নাই দেখিয়া মেমসাহেবের নিকট আসিয়া বলিলেন, “হুজুর ! আর একটি কার্য্য করিতে হইবে, গোপনে বলিব ।” মিসেস কেনী বলিলেন, “তুমি যাহা ভাল জান কর, আমার নিকট আর জিজ্ঞাসা করিও না।’ হরনাথ তখনি আপিস ঘরে যাইয়া কি মন্ত্রণা করিলেন তিনিই জানেন । এক ঘন্টার পব একপ্রকার হৃদয়বিদারক শব্দ শুনা গেল। বাবা গো—মলেম গে —আমি কিছুই জানি না—হা খোদা— সপ্তম তরঙ্গ ঘরজামাই এক গাছের বাকল অন্ত গাছে লাগে না । কলমের চারাও একেবারে থাটি উতরে না। আর একটি কথা, শত বৎসরও যদি কোন গাছের উপর ভিন্ন গাছ জীবিত থাকিয়া ডালপালা ছাডে, তত্ৰাচ তাহার নাম পরগাছা । জামাই পরগাছ, জামাই কলমের চারা এবং ব্যবহারে বাকল । হাজার ঘস মাজ, মিশিবার নহে । মিশিবে না। স্কুল কথা জামাই জেতেই বিশ্বাস নাই, তারপর আবার ভাইঝি-জামাই। খুড়-ভাইপোয়ে প্রায়ই কাটাকাটি, মারামারি, খুনখুনি। পরিশেষে —শ্ৰাদ্ধ আদালত পৰ্য্যন্ত গড়ায়। পবিণামে উভয়ে প্রায় এক ক্ষুরে মাথ মুড়িয়া পরের অন্নে উদরপূরণ, কেহ অন্য কোন নীচ ব্যবসায় অবলম্বন করিয়া জীবিক নিৰ্ব্বাহ করা ভিন্ন আর কোনই ভাল ফল দেখা যায় না। এক রক্ত, এক গোত, এক বংশ, তাতেই এই দশা—পরগোত্র, পরপুত্র জামাই, তাহার সঙ্গে এক কয়, এক প্রাণ, দুইয়ে এক হওয়া বড়ই কঠিন কথা । যাহাদের শরীর এক রক্তে গঠিত, তাহাদের মধ্যে বিবাদ-বিসংবাদ থাকা স্বত্ত্বেও রক্তের গুণ না থাকিয়া যায় না । পাষাণ হইলেও সময়ে নরম হয়, কালে মেহ, ভক্তি, প্রণয় এবং প্রেমভাব—সে কলুষিত পাপময় অস্তরেও দেখা যায়, জামাই পরের সস্তান, পররক্তে গঠিত, সুতরাং মনের ভাব ভিন্ন, স্বভাব ভিন্ন, হৃদয় ভিন্ন । সে বসে থাকিবার নয় । থাকিবে কেন, সে শ্বশুরকে পিতৃতুল্য মানিবে কেন ? সে খুড়-শশুরকে শশুরের স্থানে বরণ করিবে কেন ? তার কার্য্য-উদ্ধারই ভক্তি, তার স্বার্থসাধনই শ্রদ্ধা,