পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদাসীন পথিকের মনের কথ! Y 8% আদর বাড়ে না, তেমনি কামিনী-কোমলপদের আঘাত সহ না করিলেও রসিকনামের সার্থকতা হয় না –বোধহয় এই অপকথাটা বগীরুদিনের হৃদয়ে সৰ্ব্বদ। জাগিত । তাই তিনি ঐ সকল কোমল পদেব আঘাত সহ করিতেন—শরীর পবিত্র করিতেন। পূৰ্ব্বপুরুষের নামেও কিছু শুনিতেন । আরও একটি আশা ছিল। মীরসাহেবের অনুগ্রহ আর স্বধৃষ্টি— বিষয়াদির কার্য্যেও মীরসাহেব তাহার উপদেশ গ্রহণ করেন, ইহাও তাহার অস্তরে অন্য একটি আশা । কিন্তু তাহার ভাগ্যে শেষ আশাটি কখনও পূর্ণ হয় নাই। বিষয়াদি কার্য্যে দেবীপ্রসাদের কথাই বলবৎ থাকিত । এই দুঃখে বসীরুদিন সৰ্ব্বদাই চিস্তিত ও দুঃখিত থাকিতেন। সময় সময় সে দুঃখের কাহিনী মীরসাহেবের নিকট স্পষ্টভাবে বলিতেও ক্রটি করিতেন না । মীরসাহেব কিন্তু সে কথায় কান দিতেন না। যাক সে কথা । এখনকার কথা এই যে, এত আমোদ মুহূর্তমধ্যেই বন্ধ হইল। এক দেবীপ্রসাদ আসিয়া নাচ, গান, বাজনা মাটি করিয়া দিল। এই কথাট। বসীরুদিনের শিরায় শিবায় বসিয়া গেল । মীরসহবের গমনের আয়োজন, পালকি-বেহার সমুদায় প্রস্তুত-হাসি, তামাশা, রসিকতা, বৃগড়ের কথা আব কাহারও মুখে নাই । সেতারের তার ছিড়িয়াই রহিল। নৰ্ত্তকীর পায়েব নুপুব ফরাসের উপরে যেস্থানে খসিয়া পড়িয়াছিল, সেইস্থানেই পড়িয়া রহিল । বসীরুদ্দিন বারান্দায় আসিয়া মৃদু-মৃত্যু স্বরে বলিতে লাগিল, “এখন না যাইয়া প্রাতে গেলেও হইতে পারিত।” মীরসাহেব সে কথায় কর্ণপাতও করিলেন না । তিনি প্রস্তুত হইয়া পালকিতে উঠিলেন । বৈঠকখানাঘরের দ্বার বন্ধ হইল। স! গোলাম বিনোদ খানসামার সহিত চুপি চুপি কি কথা কহিয়া উহার বসিবার কুঠরিতে বসিয়া আছেন। চঞ্চল ভাব। রাত্রি প্রায় একটা—কি চিন্তা করিতে করিতে একবার বাটির মধ্যে তাহার শয়নকুঠরিতে গিয়া আবার ফিরিয়া আসিলেন। আবার বাটির মধ্যে গিয়া সমুদয় স্থান অতিসাবধানে বেড়াইয়া দেখিয়া আসিলেন। সকলেই নিদ্রিত, কাহারও সাড়া-শব্দ পাইলেন না। আজিই সময়, আজিই অবসর, এই উপযুক্ত সময় । মনে মনে স্থির করিয়া এক-পায়ে দু-পায়ে মীরসাহেবের তোশাখানার দিকে চলিলেন। তাহার এরূপ চলাফেরা নূতন নহে। আরও কয়েকদিন নিশীথ সময়ে মীরসাহেবের তোশাখানার দিকে পা ধরিয়াছেন}} চুপে চুপে বাড়ির অনেক ধর খুজিয়াছেন।