পাতা:মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্রহ প্রথম খণ্ড.djvu/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>8転r মীর মশাররফ হোসেন রচনাসংগ্ৰহ মাঙ্গন ও বিনোদ দুজনেই তোশাখানার জমাদার। মাঙ্গন মুরসাহেবের বিশ্বাসী এবং প্রধান চাকর । বিনোদ মাঙ্গনের সাহায্যকারী । ভুল মিয়া ( জামাইবাৰু) অর্থাৎ সা গোলাম পূৰ্ব্ব হইতেই ঐ তোশাখানার কোথায় কি আছে বিনোদের সাহায্যে সকলি জানিয়াছিলেন। কোন স্থার খোলা থাকে, কোন জানালা বন্ধ, কোন দিকে বাক্স, কোন পাশ্বে আলমারি-সিন্ধুক সকলি তাহার জানা ছিল। জামাইবাবু সংসারের সমুদয় ভার গ্রহণ কবিয়াছেন। মীরসাহেবের আদেশ ও অল্পগ্রহেই তাহার ঐ অধিকার । মাঙ্গন মীরসাহেবের বিশ্বাস তাহ জামাইবাবু বিলক্ষণ বুঝিয়াছিলেন। মাঙ্গনও বিশ্বাসের গৌরব দেখাইতে অনেক গুপ্তকথা, যাহা কেহ জানিত না, তাহার কিছু কিছু জামাইবাবুর নিকট প্রকাশ করিয়া বিশেষ বিশ্বাসী হইয়াছে। সা গোলামের বিশ্বাস, মাঙ্গন যাহা বলে সে-সমুদয়ই সত্য । মাঙ্গন গাঁজাখোর—কিন্তু সরল। সা গোলায় বিনোদের সাহায্যে তোশাখানার দরজা খোলা পাইলেন । সাহসের উপর নির্ভর করিয়া চোরের প্রপিতামহের মৃগয় অতিসাবধানে পা ফেলিয়া তোশাখানার মধ্যে প্রবেশ করিলেন । বিনোদের অনুগ্রহে তোশাখানা অন্ধকার। বাতিটি ইচ্ছা করিয়াই নিবাইয়া দেওয়া হইয়াছিল। ঘোর অন্ধকার, কিছুই দেখিবার সাধ্য নাই ! কেবল আছুমান আর হাতের আন্দাজ এই দুইটির উপর নির্ভর করিয়াই জামাইবাবু অন্ধকার ঘর-মধ্যে আপন অভিষ্ট সাধনের জন্য হামাগুড়ি দিয়া যাইতে লাগিলেন। মাঙ্গন কিছুই জানে না। বিনোদকেও আসল কথা বলেন নাই। কেবলমাত্র এই বলিয়াছিলেন যে, নিশীথ-সময়ে কোন গুপ্তস্থানে আমোদ-আহ্লাদ করিতে যাইব, তুমি তোশাখানার দ্বার খুলিয়া রাখিও । আমি তোমাকে খুব গোপনে জাগাইয়া লইয়া যাইব । বিনোদ জানিলেও মা’র নাই-পূৰ্ব্ব মন্ত্রণাই তখন আশ্রয়। মাঙ্গন জাগিলেও শীঘ্ৰ উঠিবে না। কারণ সে নেশায় ভোর। সা গোলাম গড়াইয়া হামাগুড়ি দিয়া নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হইলেন। যে জিনিসের জন্ত তাহার এত পরিশ্রম, এত চেষ্ট-মহাপাপকেও তুচ্ছ-জ্ঞান করিয়াছেন, সে জিনিসটি হস্তগত হইল। জছিয়তনাম যে বাক্সে আছে সন্ধানে জানিয়াছিলেন সে বান্ধটি হস্তগত হইল। বিশেষ সাবধানে হাতবন্ধটি বগলে চাপিলেন। মাঙ্গন টের পাইল যে, কে যেন ঘরের মধ্যে আসিয়া কি লইয়া গেল। নেশার ক্টোকেউঠতে ইচ্ছা হইল।